আইপিও সমন্ধে সমস্তকিছু জানতে এই লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। তাহলে দেখবেন কম প্রশ্ন থাকবে না আমার বিশ্বাস। যদি কোনো প্রশ্ন থেকে যায় IPO সমন্ধ তাহলে কমেন্ট করে জানান।
আইপিও কি?
যখন কোনো কোম্পানি প্রথমবার Public এর জন্য কোম্পানির শেয়ার জারি করে, একে IPO (Initial Public Offering) বলে।
আইপিও এর মাধ্যমে কোম্পানি শেয়ার public কে বিক্রি মাধ্যমে কোম্পানি টাকা সংগ্রহ করে এবং public কোম্পানির শেয়ার পেয়ে যায় (অর্থাৎ public কোম্পানির অংশীদার হয়)।
আইপিও এর পরে , কোম্পানি লিস্ট (List) হয়ে যাবে stock market exchange এ। এবং এক্সচেঞ্জের মধ্যে লিস্টিং (listing) থাকা অন্য স্টক এর মত সকাল ৯:১৫ থেকে বিকেল ৩:৩০ পর্যন্ত শেয়ার কেনা ও বিক্রি করা সম্ভব।
বাংলাদেশে, দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ আছে যা হলো Dhaka Stock Exchange (DSE) এবং Chittagong Stock Exchange (CSE)।
ভারতে, National Stock Exchange (NSE) এবং Bombay Stock exchange (BSE)।
এই Stock এক্সচেঞ্জে Initial Public Offering এর পরে stock listing হয় এবং এই এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ার ট্রেডিং করা হয়ে থাকে।
শেয়ার মার্কেটে যেসব শেয়ার ট্রেডিং করা হয়। ওই কোম্পানির শেয়ার প্রথমে আইপিও হয়েছিল, এরপর শেয়ার মার্কেটে লিস্টিং হয়েছিল। এবং বর্তমানে প্রতিদিন ট্রেড হয়ে থাকে। যে কেউ চাইলে ওই কম্পানির শেয়ার ট্রেডিং সময়ে (৯:১৫ থেকে ১৫:৩০ পর্যন্ত) কিনতে ও বিক্রি করতে পারে।
কোম্পানির ইচ্ছে মত যেকোনো এক্সচেঞ্জে (Exchange) কোম্পানি কে list করতে পারে। যেমন ভারতের অনেক কোম্পানি আমেরিকার স্টক এক্সচেঞ্জে লিস্ট করা আছে। এবং আমেরিকার মানুষ ওই শেয়ার সহজেই কিনতে ও বিক্রি করতে পারবে।
আইপিও এর মাধ্যমে যে শেয়ার কেনা হয় সেগুলি কোম্পানি থেকে সরাসরি শেয়ার কেনা হয়। যা primary মার্কেট থেকে শেয়ার কেনা হয়েছে। অর্থাৎ সরাসরি কোম্পানি থেকে শেয়ার কেনা হয়েছে এবং ওই টাকা সরাসরি কোম্পানির কাছে পৌঁছাবে।
এরপর কোম্পানির শেয়ার IPO এর মাধ্যমে পাবলিক কে বিক্রি করার পরে। ওই কোম্পানিটি stock এক্সচেঞ্জে লিস্টিং হয় কিছুদিনের মধ্যেই। এবং লিস্টিং হওয়ার পরে যারা শেয়ার কিনেছিল কোম্পানি থেকে তারা বিক্রি করতে পারে অন্য কাউকে। যার ফলে এটি সেকেন্ডারি মার্কেট (secondary market) নামেও পরিচিত। এখানে শেয়ার কিনলে ওই টাকা কোম্পানির কাছে পৌঁছয় না।
কেনো Initial Public Offering এর মাধ্যমে টাকা জোগাড় করা হয়?
বিভিন্ন কারণে কোম্পানি আইপিও নিয়ে আসতে পারে, যেমন
- কোম্পানির ব্যাবসা বাড়ানোর জন্য টাকার প্রয়োজন হয় এর জন্য I ইনিশিয়াল পাবলিক অফার এর মাধ্যমে সহজেই টাকা সংগ্রহ করা হয় পাবলিক কে শেয়ার বিক্রি করে।
- কিংবা কোম্পানির নতুন কোনো প্রোডাক্ট বানানোর জন্য টাকার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
- রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্টের জন্যও IPO করা হয়ে থাকে।
- কোম্পানির যদি কোনো ধার থাকে তাহলে ওই ধারকে কম করার জন্যও IPO এর মাধ্যমে টাকা জোগাড় করে ধার কম করা হয়।
- এছাড়া, কখনো কখনো কোম্পানির বর্তমান অংশীদার নিজের শেয়ার বিক্রি করতে চাইছে।
- এছাড়াও বিভিন্ন কারণে আইপিও এর মাধ্যমে টাকা জোগাড় করা হয়।
IPO তে শেয়ারের দাম কিভাবে ঠিক হয়?
IPO তে শেয়ারের দাম দুইভাবে ঠিক হয়:
- Fixed Price Issue
- Book Building Issue
1. Fixed Price Issue:
সাধারণত, কোম্পানি একটি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক কে IPO এর কাজে ব্যবহার করে। কোম্পানি ও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক মিলে একটি দাম বেঁধে দেয়। ওই বাঁধা দামেই শেয়ার issue করে।
যেহেতু এই দামটি ফিক্সড তাই এটিকে ফিক্সড প্রাইস ইস্যু (Fixed Price Issue,) বলা হয়।
2. Book Building Issue:
Book Building Issue তে কোম্পানি ও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক মিলে একটু দামের range (পরিসীমা ) ঠিক করে। এবং ওই দামের অপর নির্ভর করে কে কেউ bid লাগাতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে, ABC কোম্পানি IPO তে শেয়ারের দাম রাখলো 100 থেকে 110 টাকা। অর্থাৎ যারা ওই কম্পানির শেয়ার কিনতে চাইবে তাদের 100 থেকে 110 টাকার মধ্যে Bid লাগাতে হবে।
বুক বিল্ডিং ইস্যু তে, সব থেকে কম দাম যেটা রাখা থাকে ওই দামকে Floor Price বলে। ( এখানে ABC কোম্পানির ১০০ টাকা হলো Floor Price).
IPO কতদিনের জন্য খোলা থাকে?
সাধারণত, ৩ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত IPO খোলা থাকতে পরে।
ওই খোলা সময়ের মধ্যে IPO তে ইনভেস্ট করতে পারেন।
আইপিও তে কত শেয়ার কেনা যায়?
আইপিও তে ১,২ অথবা ৩ টা কিম্বা মনখুশি শেয়ার কেনা যায়না। এখানে লটে (Lot এ) শেয়ার কিনতে পারবেন। কমপক্ষে ১ টি লট কিনতেই হবে।
উদাহরণ হিসেবে, একটি Lot এ যদি ১০০ টি শেয়ার থাকে, তাহলে আপনাকে ১০০ টি শেয়ার কিনতে হবে অর্থাৎ ১ টি লট। আবার ১০০ এর বেশি শেয়ার কিনতে গেলে ২ টি lot কিনতে হবে ( তাহলে ২০০ টি শেয়ার কিনতে পারবেন)
একটি লটে কতগুলি শেয়ার থাকবে , টা কোম্পানির ঠিক করে। একটি লটে ১০ টি শেয়ার থাকবে নাকি ১০০০ এটা সম্পূর্ণ কোম্পানির ঠিক করে।
সেই সঙ্গে ধরুন ABC কোম্পানির শেয়ারের দাম ২৫০ টাকা করে হলে এবং ১ টি লটে যদি ১০০ টি শেয়ার থাকে। তাহলে কম করে ২৫০০০ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে ABC কোম্পানির IPO তে শেয়ার কেনার জন্য।
আইপিও তে শেয়ার allotment কিভাবে হয়?
মূলত ইনভেস্টর কে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়
- Retail Investor (অর্থাৎ কম টাকা ইনভেস্ট করে এমন ইনভেস্টর দের রিটেইল ইনভেস্টর বলা হয়)
- HNI Investor (High Net Worth Individual Investor) [ অর্থাৎ, যেসব ব্যাক্তি অনেক টাকার মালিক ]
- QIB Investor (qualified institutional buyers Investor) [ OIB কেনো একজন ব্যক্তি নয় , এগুলি সাধারণত কোনো ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি হয়ে থাকে]
রিটেইল ,HNI এবং QIB ইনভেস্টর দের জন্য একটি নির্দিষ্ট শতাংশের শেয়ার কেনার কোটা (রিজার্ভ) থাকে। এবং ওই কোটা সম্পূর্ণ হলে, আমরা oversubscribe IPO বলে থাকি।
এবং যত শেয়ার আছে ওই শেয়ারগুলি না কেন হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে অনেক শেয়ার বিক্রি হলো না। তখন ওই আইপিও কে Undersubscribe IPO বলা হয়।
শেয়ার allotment এর সময় যত শেয়ার আছে ওই শেয়ার কেনার জন্য কম খরিদ্দার থাকে ( অর্থাৎ undersubscribe IPO তে), তাহলে যারা যারা কেনার জন্য Bid লাগিয়েছিল সবাই শেয়ার পাবে।
কিন্তূ যদি IPO Oversubscribe হয় ( অর্থাৎ শেয়ারের তুলনায় খরিদ্দার বেশি), এই অবস্থায় সব ইনভেস্টর শেয়ার পায় না অথবা পেলেও কম পরিমাণ পায়।
উদাহরণ হিসেবে, ১০০ টা লট শেয়ার আছে এবং ৫০ জন ইনভেস্টর প্রত্যেকে ৪ টি করে লটের জন্য bid করেছে। তাহলে এখানে সবাই ২ টি করেই লট পাবে। আর যদি ১০০ জন bid করে থাকে তাহলে ১ টি করেই লট শেয়ার পাবে। আবার ২০০ জন bid করলে কম্পিউটারের লটারীর মাধ্যমে যেকোনো ১০০ জন একটি করে লট পাবে।
ইনভেস্টর আইপিও তে ইনভেস্ট কেনো করেন?
বেশিভাগ সময় কোম্পানি আইপিও তে শেয়ারের দাম কিছুটা কম রাখে, যার ফলে দাম অনুযায়ী আকর্ষণীয় লাগে ইনভেস্টর দের এবং সহজেই বিক্রি হয়ে যায়।
অনেক ইনভেস্টর আইপিও তে ইনভেস্ট করে কারণ কোম্পানির দাম অনেক সস্তা পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে বিক্রী করলে অনেক দাম পাওয়া যেতে পারে।
অনেক সময় Initial Public Offering তে কেনা শেয়ার যখন Listing হয় stock এক্সচেঞ্জে তখন শেয়ারের দাম খুব বেড়ে যায়। তাই অনেক ইনভেস্টর শেয়ার লিস্টিংয়ে বিক্রি করে লাভ করার জন্যও IPO তে ইনভেস্ট করে থাকে।
আবার অনেকে কোম্পানির ব্যাবসা ও উন্নতি দেখে কিনে থাকে। যার ফলে long term এ শেয়ার বিক্রী করে লাভ করতে পারে।
IPO তে শেয়ার allotment হওয়ার পরে ওই শেয়ার যখন Stock এক্সচেঞ্জে লিস্টিং হয়। তখন আইপিও এর দামের তুলনায় অনেক বেশি দামে ট্রেড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে (এটিকে Listing Gain বলা হয়)। তাই অনেকেই আইপিও তে শেয়ার কিনে রাখে লিস্টিংয়ের সময় বিক্রি করার জন্য।
(উল্টোটাও হতে পারে, অর্থাৎ IPO এর দামের থেকে কম দামেও লিস্টিং হতে পারে , এটি সম্পূর্ণ demand এর ওপর নির্ভর করে, ডিমান্ড বাড়লে শেয়ারের দাম বাড়বে এর কমলে শেয়ারের দাম কমবে)।