ব্যাঙ্ক(Bank) অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান (financial institutions) একটি কার্ড প্রদান করে থাকে, ওই কার্ড ব্যবহার করে আপনার কাছে নগদ টাকা ছাড়াই কোনোরকমের কেনাকাটা করতে পারবেন অথবা বিল পেমেন্ট করতে পারবেন ।
ক্রেডিট কার্ড কি?
ক্রেডিট কার্ড হল, একটি ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা জারি করা প্লাস্টিক বা ধাতুর একটি পাতলা আয়তক্ষেত্রাকার টুকরো, যা কার্ডধারকদের অর্থ ধার করতে দেয়, ওই অর্থ কোনো পণ্য ও পরিষেবার পেমেন্ট করার জন্য ব্যাঙ্ক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে৷
এবং ওই খরচ করা অর্থকে সাধারণত পরের মাসের ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে হয়। সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিয়ে ফেললে কোনোরকমের অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়না।
এবং যদি কোনো কারণবশতঃ নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে টাকা ফেরত না দেওয়া হয় তাহলে ব্যাঙ্ক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনেক বেশি পরিমান সুদ চার্জ করে এবং সেই সঙ্গে পেনাল্টি হিসেবে অতিরিক্ত টাকাও চার্জ করতে পারে।
ক্রেডিট কার্ড দেওয়া অর্থিক প্রতিষ্ঠান সমস্ত শর্তসাপেক্ষের মাধ্যমেই গ্রাহকে ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে থাকে।
সহজ ভাবে ক্রেডিট কার্ড কি?
সহজ ভাষায় ক্রেডিট কার্ড হলো, ATM কার্ডের মতো একটি কার্ড। ওই কার্ড কোনো ব্যাঙ্ক অথবা কোনো অর্থিক প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে। ওই কার্ড ব্যবহার করে আপনার কাছে টাকা না থাকলেও কোনো কিছু কেনার জন্য অনলাইনে পেমেন্ট করে কেনাকাটা করতে পারবেন। এছাড়াও কোনো দোকানে দিয়ে কার্ড swipe করেও পেমেন্ট করতে পারবেন।
অর্থাৎ এই কার্ডের উদ্দেশ্য হলো, ধার করে কোনো জিনিস অথবা পরিষেবার পেমেন্ট করতে পারবেন। এসব ছাড়াও এটিএম মেশিনের থেকে টাকাও তুলতে পারবেন।
এবং ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে মাসিক লিমিট বেঁধে দেওয়া হয় , যার ফলে আপনার ক্রেডিট লিমিট যদি মাসে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। তাহলে ১০ হাজার টাকার বেশি ১ মাসে খরচ করতে পারবেন না অথবা এটিএম মেশিনে থেকে তুলতে পারবেন না।
ক্রেডিট কার্ড কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে?
- যেসব দোকানে কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট নেওয়ার জন্য কার্ড swipe মেশিন থাকে। ওই সমস্ত দোকানে যেকোন জিনিস কেনার পরে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করতে পারবেন।
- অনলাইনে শপিংয়ের পেমেন্ট করার জন্য ক্রেডিট কার্ডের নম্বর ব্যবহার করে পেমেন্ট করতে পারবেন।
- এছাড়াও রিচার্জ বিল পেমেন্ট এইসমস্ত কাজের জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- ধরুন আপনার কাছে টাকা নেই কিন্তু হসপিটালের বিল দিতে হবে। এক্ষত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করতে পারেন।
- এছাড়াও, ATM মেশিনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতেও পারবেন (কিন্তু ক্রেডিট কার্ড দেওয়া অর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যাঙ্ক প্রচুর টাকা চার্জ করে ক্রেডিট কার্ড থেকে এটিএম এর মাধ্যমে ক্যাশ তুললে ) তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম থেকে টাকা না তোলাই ভালো।
ক্রেডিট কার্ড কিভাবে ব্যবহার করবেন?
ক্রেডিট কার্ড নিন, এবং যেসমস্ত দোকানে কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট নেয় ওই সমস্ত দোকান থেকে জিনিস কেনার পরে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট করতে পারেন।
অথবা এটিএম মেশিন থেকে টাকা তুলতে পারেন কিন্তু না তোলাই ভালো কারণ এটিএম থেকে ক্যাশ তুললে ক্রেডিট কার্ড যে ব্যাঙ্ক অথবা সংস্থা দিয়েছে ওই সংস্থা প্রচুর পরিমান টাকা চার্জ করে।
এছাড়াও অনলাইন শপিং এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন।
ক্রেডিট কার্ড কিভাবে পাবেন?
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার ৩টি উপায় আছে :
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কিছু পরিমান টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে ওই ডিপোজিট টাকার পরিমান অনুযায়ী একটি ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়ে থাকে। ফিক্সড ডিপোজিটের টাকার পরিমান যদি বেশি হয় তাহলে বেশি পরিমান ক্রেডিট লিমিট পাবেন এবং ফিক্সড ডিপোজিটের পরিমান কম হলে কম পরিমান ক্রেডিট লিমিট পাবেন।
- অথবা, আপনি কোনো ব্যাঙ্ক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আপনার ইনকামের প্রমান দেখতে হবে। যদি আপনার ইনকাম ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয় তাহলেই ক্রেডিট কার্ড পেয়ে যাবেন।
- এছাড়াও ব্যাংকের সঙ্গে যদি খুব বেশি লেনদেন হয় আপনার তাহলেও ব্যাঙ্ক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে।
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা
- আপনার কাছে টাকা না থাকলেও সহজেই ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা ধারের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন।
- ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ফলে আপনি যদি সময়মতো ধার করা টাকা শোধ করে থাকেন তাহলে আপনার Credit score বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ব্যাঙ্ক আপনার ওপরে বিশ্বাস আরো বেড়ে যায়। পরবতীকালে লোণের প্রয়জন হলে ব্যাঙ্ক আপনাকে খুব সহজেই লোন দিয়ে দেবে আপনার টাকা শোধ করার ইতিহাস অনুযায়ী।
- বিভিন্ন জায়গায় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পেমেন্টের মাধ্যমে ক্যাশব্যাক অথবা ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। তাই ক্রেডিট কার্ড থাকলে সুবিধা পাওয়া যায়।
- ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে টাকা পাওয়া যায় ওই টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফেরত দিলে কোনোরকমের সুদ লাগেনা। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য সুদ ছাড়া টাকা পাওয়া যায় খরচ করার জন্য।
ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা অনেক বেশি থাকলেও কিছু অসুবিধা আছে , তা হলো :
- ক্রেডিট কার্ড থাকলে অনেক বেশি শপিং করার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। তাই বেশি খরচ হতে পারে।
- ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে যেসব খরচ করা হয় , ওই খরচ করা টাকার পরিমান পরের মাসের একটি নির্দিষ্টি তারিখের মধ্যে জমা করতে হয়। যদি কোনো কারণে ১ দিন দেরি হয়ে যায় তাহলে ব্যাঙ্ক অনেক টাকা ফাইন এবং সুদ চার্জ করে। এবং এর ফলে আপনার ক্রেডিট স্কোর কমে যাবে। যার ফলে ব্যাঙ্ক থেকে লোন পেতে সমস্যা হতে পারে।
- ক্রেডিট কার্ডের আরো একটি সমস্যা হলো : আপনি যদি এটিএম থেকে টাকা তুলেন তাহলেও ব্যাঙ্ক চার্জ করে টাকা তোলার জন্য।
- দৈনদিন জীবনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সমস্ত জায়গায় পেমেন্ট করার সুবিধা বর্তমানে নেই।
ক্রেডিট কার্ডের লিমিট কি?
ধরুন আপনার ক্রেডিট কার্ডের লিমিট যদি ১০ হাজার টাকা হয়ে থাকে তাহলে আমি মাসে ১০ হাজার টাকার বেশি ব্যবহার করতে পারবো না ওই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সচেতনতা
আর সময়মতো টাকা পেমেন্ট করে দেওয়া উচিত। নাহলে বেশি বেশি টাকা দিতে হতে পারে।
ক্রেডিট কার্ডের বিল কতদিন পরে পেমেন্ট করতে হয়?
যদিও বেশিরভাগ ব্যাংকে ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে জমা দেওয়ার শেষ তারিখ রাখে।
অর্থাৎ আপনি যদি মাসের ১ তারিখেই ক্রেডিট কার্ডে সমস্ত খরচ করে থাকেন তাহলে ৪৫ থেকে ৫০ দিন সময় পাবেন টাকা ফেরত দেওয়া জন্য। এবং কোনোরকমের শুধ লাগবে না নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফেরত দিয়ে দিলে।