তাপ সঞ্চালন কাকে বলে?
উচ্চ তাপমাত্রা বিশিষ্ট স্থান থেকে নিম্ন তাপমাত্রা বিশিষ্ট স্থানের দিকে তাপের প্রবাহকে তাপ সঞ্চালন বলা হয়।
অর্থাৎ, দুটি জায়গায় তাপমাত্রার পার্থক্য থাকলে, অধিক তাপ মাত্রার জায়গায় থেকে কম তাপমাত্রার জায়গার দিকে তাপের প্রবাহ হয় । একেই তাপের সঞ্চালন বলা হয়।
তাপ সঞ্চালনের প্রক্রিয়াগুলি
৩ টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ সঞ্চালিত হতে পারে। অর্থাৎ ৩ টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়ে পারে। যা হলো:
- পরিবহন (Conduction).
- পরিচলন (convection).
- বিকিরণ (Radiation).
১. পরিবহন
যে পদ্ধতিতে পদার্থের অণুগুলি তাদের স্থান পরিবর্তন করে না, শুধুমাত্র অণুগুলি স্পন্দনের মাধ্যমে এক অণু পার্শ্ববর্তী অণুকে তাপ প্রদান করে। এভাবেই পদার্থের উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতম অংশের দিকে তাপ সঞ্চালিত হওয়াকে পরিবহন বলা হয়।
কঠিন বস্তুতে পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়।
পরিবহন পদ্ধতির উদাহরণ :
ধরুন, আপনি লোহার একটি প্রান্তকে গরম করলেন। তখন গরম হওয়া প্রান্তে থাকা লোহার অণুগুলির মধ্যে স্পন্দন শুরু হয়। যার ফলে ওই অণুগুলি তাদের পাশের অণুগুলিকে স্পন্দিত করায়। এর ফলে পার্শ্ববর্তী অণুগুলিও উষ্ণ হয়ে যায়। এভাবেই ওই উষ্ণ হওয়া অণুগুলির মধ্যেও স্পন্দন শুরু হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে তাপের সঞ্চালন হয়ে থাকে কঠিন বস্তুতে।
যে মাধ্যমের অণুগুলো যত বেশি সুদৃঢ় সেখানে পরিবহন তত বেশি হয়ে থাকে।
পরিবহন পদ্ধতিতে তাপের সঞ্চালন কঠিন পদার্থের মধ্যেই হয়ে থাকে। কিন্তূ পরিবহন পদ্ধতিতে তরল পদার্থের মধ্যে খুব সামান্য তাপ সঞ্চালন হয়ে থাকে। বায়বীয় মাধ্যমে আরো অনেক কম পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হয়ে থাকে। কিন্তূ শূন্য মাধ্যমে পরিবহন মাধ্যমে তাপ সঞ্চালন সম্ভব হয়না।
২. পরিচলন
কোনো পদার্থের অণুগুলি তাপ গ্রহণ করে, উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশের দিকে অণুগুলি চলাচলের মাধ্যমে তাপের সঞ্চালন ঘটায় এই পদ্ধতিকেই পরিচলন পদ্ধতি বলা হয়।
বিশেষত তরল এবং বাষ্পীয় পদার্থের মধ্যে তাপ পরিচলন পদ্ধতির মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়।
পরিচলন পদ্ধতির উদাহরণ :
- আমরা যখন গ্যাস অথবা উনুনের সাহায্যে পানি গরম করি। তখন পানির পাত্রের নিচের দিক গরম হয় এবং পাত্রের নিচের দিকের পানির অণুগুলি তাপ গ্রহণ করে উষ্ণ হয়ে যায়।
- পাত্রের ওপরে পানি ঠান্ডা এবং নিচের পানি গরম। যেহেতু, ঠান্ডা পানি ভারী হয় গরম পানির তুলনায় তাই ঠান্ডা পানি পাত্রের নিচের দিকে চলাচল করে।
- এভাবেই গরম হওয়া পানির অণুগুলি পাত্রের ওপরে দিকে উঠে আসে এবং ঠান্ডা পানির অণুগুলি পাত্রের নিচে দিকে যায়। এভাবেই স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে তাপের সঞ্চালন হয়।
৩. বিকিরণ
যে পদ্ধতিতে তাপ জড় মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াই তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের আকারে উষ্ণ বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে সঞ্চালিত হয় তাকে বিকিরণ বলে।
বিকিরণ পদ্ধতির মাধ্যমে তাপ সঞ্চালনের জন্য কোনো প্রকারের মাধ্যমের ( মাধ্যম যেমন- কঠিন, তরল, বায়বীয় ইত্যাদি ) প্রয়োজন হয় না।
সূর্য থেকে পৃথিবীতে যে তাপ পৌঁছয় , ওই তাপ বিকিরণ পদ্ধতিতে পৃথিবীতে পৌঁছয়।
বিকিরণ পদ্ধতির মাধ্যমে তাপ অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে দূরত্ব বেশি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপের পরিমান কমে যাবে।
আমরা যখন রান্না করি তখন পরিবহন, পরিচলন এবং বিকিরণ এই ৩টি পদ্ধতির মাধ্যমে তাপের সঞ্চালন হয়ে থাকে :

ওপরের ছবিতে, দেখতে পাচ্ছেন।
- পরিবহন পদ্ধতির মাধ্যমে পাত্রটি গরম হচ্ছে।
- পরিচলন পদ্ধতির মাধ্যমে পাত্রের মধ্যে থাকা পানি গরম হচ্ছে।
- এবং, উনুন থেকে তাপ বিকিরণ করছে। এই বিকিরণের তাপ আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ছে।