যখন পানির অস্থায়ী প্রবাহের কারণে নদী-নালা, খাল, বিল, হাওর ও নিচু এলাকা ছাড়িয়ে পৃথিবীর স্থলভাগ জলপ্লাবিত হয়, এরকম প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক দুর্যোগকে বন্যা বা প্লাবন বলা হয়।
অত্যধিক অবিরাম বর্ষার কারণে, বন্যার জল বাঁধ বা বাঁধ ভাঙার কারণে জনবহুল এলাকায় প্রবেশ করে, যা প্রাকৃতিক বন্যার কারণেও হতে পারে।
কখনো কখনো মানুষের ভুলের কারণে কোনো বাঁধ বা বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় একে অপ্রাকৃতিক বন্যা বলে।
বন্যা কেন হয়?
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত– কোনো স্থানে টানা কয়েকদিন ভারী বর্ষণে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে, ফলে নদী সংলগ্ন জমি তলিয়ে যায়।
জোয়ারসৃষ্ট বন্যা– জোয়ারের ফলেও বন্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে ।
অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা – পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় বন্যার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ভূমিধসের কারণে সৃষ্ট অবরোধ, নদীপথের সুস্পষ্ট উন্নয়নের অভাব, নদীর ধারণ ক্ষমতার অভাব, ব-দ্বীপ মোহনায় বালির বাধা।
নদীর তলদেশে পলি জমা-পাহাড় থেকে উৎপন্ন নদী সমতল ভূমিতে প্রবেশের সময় প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করে। এই পলি মাটি ও বালির আকারে নদীর তলদেশে প্রতিবিম্বিত হয়, যার কারণে নদীর তলটি ক্রমাগত অগভীর হয়ে ওঠে এবং নদীতে পানি সংরক্ষণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। এ কারণে বর্ষাকালে বন্যার তীব্রতা বেড়ে যায়।
বনের অবক্ষয়– বন উজাড়ের ফলে ভূমি ক্ষয়ের হার বাড়ছে, যার কারণে নদী ও জলাশয়ের পানি সংরক্ষণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
জলগ্রহন এলাকা প্রশস্তকরণ– যখন কোনো অঞ্চলের পানি সংগ্রহের ক্ষেত্রটি বেশি বিস্তৃত হয়, তখন মাঝারি বৃষ্টিপাতের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি জমা হয়ে বন্যার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।
বন্যার প্রভাব
প্রাণহানি – বন্যার প্রভাবে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মারা যায় এবং অনেক প্রাণী মারা যায়।
ফসলের ক্ষতি – বন্যার ফলে প্রচুর শস্য, ফসল নষ্ট হয় এবং শাকসবজির দাম বৃদ্ধি পায় ।
কাজ কর্ম বন্ধ – বন্যায় রাস্তা ভেঙ্গে যান চলাচল ব্যাহত হয় এবং কাজ কর্মের ক্ষতি হয় যার ফলে প্রচুর পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয় ।
রোগ বৃদ্ধি – বন্যায় মৃত মানুষ, জন্তু-জানোয়ারে প্রচুর পরিমাণে জীবাণু ছড়ায়, যা বিভিন্ন ধরনের রোগ ও মহামারী ছড়ায়।
জীবপ্রজাতির ক্ষতি – বন্যার কারণে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ জীব-প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যায়।
অর্থনৈতিক চাপ – ঘরবাড়ি ধস, ফসলের ক্ষতি, রাস্তাঘাট ধংস, কাজকর্মের ক্ষতির সৃষ্টি হয় । যা জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে।
প্রতিকার
১) প্রধান নদীর উপনদীগুলিতে অনেক জায়গায় ছোট জল সঞ্চয় বাঁধ নির্মাণ করতে হবে, যাতে প্রধান নদীতে জলের পরিমাণ বেশি না বাড়ে এবং বন্যার কারণে ক্ষতি কমাতে এটি সফল হয়।
২) গাছ লাগানোর মাধ্যমে মাটি ক্ষয়ের হার কমিয়ে বিভিন্ন অংশে বোরওয়েল নির্মাণ করতে হবে। এতে একদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বাড়বে অন্যদিকে ভূপৃষ্ঠের পানি প্রবাহের পরিমাণও কমে যাবে, যা বন্যার প্রকোপ কমবে।
৩) নদীগুলির উপর নির্মিত বাঁধ এবং জলাধারগুলিকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি জলাধারগুলিকে পর্যায়ক্রমে পরিষ্কার করতে হবে।