আমাদের অনেকেই মোবাইল ফোন কেনার আগে বুঝে উঠতে পারিনা কি ফোন কিনবেন ? এর জন্যই এই পোস্টি লেখা হয়েছে।
মোবাইল ফোন কেনার আগে যা দেখা উচিত সেগুলি হলো:-
১.RAM ও Processor
মোবাইল ফোন কেনার আগে আপনার ভেবে নেওয়া উচিত কি কাজের জন্য মোবাইল ফোনটি ব্যাবহার করবেন। ধরুন আপনি যদি অনলাইন গেম (Online Game) খেলতে চান তাহলে RAM ও প্রসেসর ভালো হওয়া চাই। আর যদি সাধারণ কাজের জন্য যেমন অনলাইনে ভিডিও দেখা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করা এরকম কাজ করতে চান তাহলে খুব বেশি ram ও ভালো প্রসেসরের প্রয়োজন হয় না।
আমি যদি গেম খেলতে চান তাহলে বর্তমান দিনে কম করে ৪জিবি (4GB) RAM এর প্রয়োজন এবং গেম খেলার জন্যে ভালো প্রসেসর মোবাইল থাকার দরকার ।
আর সাধারণ কাজকর্মের জন্য 3GB RAM কিম্বা এর থেকে অনেক কম RAM এর ফোনেও সম্ভব।
২.Display
মোবাইলের স্ক্রিনের সাইজ বেছে নেওয়া জরুরি। ছোটো মোবাইলের স্ক্রীনে ভিডিও দেখতে গেলে ভালোভাবে দেখতে পারবেন না। এবং খুব বড়ো স্ক্রিন সাইজ এর ফোন সহজে বহন করা সম্ভব নয়।
ছোট স্ক্রিনের ফোন গুলি যেভাবে পকেটের মধ্যে রেখে সহজেই নিয়ে যেতে পারি কিন্তু বড়ো ফোন গুলিকে পকেটের মধ্যে রাখার পরও কিছুটা বেরিয়ে থাকে কিম্বা সঠিক ভাবে পকেটের মধ্যে রাখা যায়না।
গেম খেলা কিম্বা ভিডিও দেখার জন্য বলেছেন বড় স্ক্রিন সাইজ এর ফোন নেওয়া ভালো , আর যদি ভিডিও অথবা গেম দুটোই খেলতে না চান তাহলে মোটামুটি একটা সাইজের ফোন নিলেও চলে। কিন্তূ খুব ছোট স্ক্রিনের ফোন ব্যাবহার করতে ভালো লাগেনা।
৩.ক্যামেরা
অনেকেই আছেন যারা খুব বেশি সেলফি ক্যামেরা অথবা মোবাইলের পেছনের ক্যামেরা ব্যাবহার করে থাকে। তাই যারা বেশি ক্যামেরা ব্যাবহার করে থাকেন তাদের জন্য ভালো ক্যামেরার ফোন কেনা অবশ্যই দরকার পড়ে।
যারা mobile এর ক্যামেরা ব্যাবহার করেই না তাদের কাছে ভালো ক্যামেরা কেনার জন্য বেশি টাকা দিয়ে লাভ কি?
সাধারণত মোবাইলের পেছনের ক্যামেরা ভালো হওয়া উচিত,কারণ কখনো কখনো এমন কোনো মুহূর্ত যদি ক্যামেরায় বন্দী করে রাখতে চান তাই ভালো ক্যামেরা রাখাই ভালো। ভালো ক্যামেরা এর অর্থ হলো বেশি পিক্সেলের ক্যামেরা মোবাইলে থাকলে বেশি ভালো ও পরিষ্কার ছবি তোলা সম্ভব। যারা শুধুমাত্র সেলফি তুলতে পছন্দ করেন তাদের জন্য সেলফি ক্যামেরাও ভালো হওয়ার প্রয়োজন।
৪.ব্যাটারি
বড়ো স্ক্রিন ও গেম খেলতে চাইলে আপনার মোবাইলের চার্জ ও খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। আর বেশি সময় চার্জ না থাকলে মোবাইল নিয়ে কোথাও গেলে মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেলে খুব সমস্যায় পড়তে পারি। তাই দরকার হয় বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি যার বেশি চার্জ স্টোর করে রাখতে পারবে এবং একবার চার্জ দিয়ে অনেক বেশি সময় ব্যাবহার করা সম্ভব। বর্তমানে ৫০০০mah এর ব্যাটারী প্রায় সমস্ত ফোনেই পাওয়া যায়। তাই ৫০০০ mah অথবা এর থেকে বেশি অ্যাম্পিয়ার পাওয়ার সেভ করে রাখতে পারবে এরকম ব্যাটারি ব্যাবহার করলে অনেক ভালো।
৫.স্টোরেজ
মোবাইলে যা কিছু সেভ করা হয় তাওই মোবাইলের স্টোরেজ এর মধ্যেই সঞ্চিত থাকে তাই মোবাইলের স্টোরেজ বেশী থাকলে বেশি পরিমাণ অ্যাপস এবং ভিডিও অডিও গান এছাড়াও বিভিন্ন রকমের ফাইল সঞ্চিত করতে পারবেন। অনেক সময়ই মোবাইলের স্টোরেজ কম থাকার কারণে কোন অ্যাপস ইন্সটল করতে পারিনা অথবা কোন অ্যাপস যেমন বড় বড় মোবাইলের গেম সঠিকভাবে চালানো সম্ভব হয়না।
অর্থাৎ অর্থাৎ মোবাইলের ইন্টারনাল স্টোরেজ পর্যাপ্ত পরিমাণ হওয়ার দরকার ।বর্তমান দিনে মোবাইলের অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম আপডেট এবং যেসব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করি অ্যাপ্লিকেশন নতুন নতুন ফিচার নিয়ে আসে এবং ওই ফিচারস গুলি নতুন আপডেটের মাধ্যমে আমাদের প্রদন করে। নতুন আপডেট মানে বেশি সাইজের মোবাইলের মধ্যে ইনস্টল করে রাখতে হয় যার ফলে বেশি স্টোরেজ লাগে।
বর্তমান দিনে মোটামুটি 64 জিবি স্টোরেজ ঠিকঠাক বলা যেতে পারে। যদিও 32 জিবি স্টোরেজে প্রায় সমস্ত রকমের সাধারণ কাজকর্ম করা যেতে পারে কিন্তু 32 নিচে স্টোরেজঃ মোবাইলে খুব একটা ভালো কাজ করা সম্ভব হয় না।
৬.অপারেটিং সিস্টেম ও user interface
ফোনের অপারেটিং সিস্টেম এবং ইউজার ইন্টারফেস ভালো হওয়া প্রয়োজন না হলে মোবাইল ব্যবহার করতে ভাল লাগবেনা।
অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড খুবই প্রচলিত এছাড়াও ISO অপারেটিং সিস্টেমের মোবাইল যেমন Iphone পাওয়া যায়।
বর্তমানে মোবাইল ফোনে user interface এ প্রচুর ads দেখা যায়। যা বিরক্তিকর এর জন্য স্টক অ্যান্ড্রয়েড (stock Android) এর ফোন ব্যাবহার করতে পারেন।
স্টক অ্যান্ড্রয়েডের অর্থ হলো গুগলের বানানো অ্যান্ড্রয়েড কে কোনরকমের পরিবর্তন না করেই সরাসরি ফোনে ব্যাবহার করা হবে। স্টক অ্যান্ড্রয়েডের মধ্যে ads দেখতে পাওয়া যায়না।
এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইলে আলাদা আলাদা UI ব্যাবহার করে থাকি। তাই আলাদা আলাদা UI দেখতে পাওয়া যায়।
৭.Audio পোর্ট এবং চার্জিং পোর্ট
অনেক মোবাইলের চার্জিং পোর্টে হেডফোন জ্যাক লাগানোর অপশন দিয়ে থাকে। সমস্যা হল চার্জ করতে করতে হেডফোন ব্যবহার করতে পারবেন না তাই এমন কোন ফোন দেখতে হবে যেখানে আলাদা করে হেড ফোনের জ্যাক দেয়া থাকবে।
৮.মোবাইল স্পীকার
মোবাইলের স্পিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই ফোন কেনার আগে মোবাইলের স্পিকার ভালোভাবে দেখে নেয়া দরকার যেমন সাউন্ড কোয়ালিটি কেমন আছে এবং স্পিকারের ভলিউম।
মোবাইলের ভলিউম যদি খুবই কম হয় তাহলে ফোন এলে আপনি শুনতে পাবেন না তাই সাউন্ড ঠিকঠাক হওয়ার প্রয়োজন।
৯.মজবুত
অনেক সময় আমাদের ফোনে কথা বলতে বলতে ফোনটা হাত থেকে পড়ে যেতে পারে, অথবা কোন কারনে ওপর থেকে পড়ে গেলে কিংবা ফোনটির উপর কোন কিছু রেখে ফেললে ওই ফোনের স্ক্রীন কাজ করতে চায় না । কিছু কিছু ফোন তো পড়ে গিয়ে চুরমার হয়ে ভেঙে যেতে পারে, তাই ফোন কেনার আগে ফোনটি কতটা মজবুত তা দেখে নিও অবশ্যই দরকার।
১০.সিকিউরিটি
শুধু ফোন কিনেই নয়, যে ফোনটি কিনছেন এই ফোনটি কতটা নিরাপদ আপনার ডেটা কারণ বর্তমান দিনে যেটা হলো এক প্রকারের কারেন্সি অর্থাৎ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই আপনার ডাটা কতটা সুরক্ষিত তা দেখার দায়িত্ব আপনার।
তাই মোবাইল কিনার আগে এমন কোন ফোন কিনতে হবে যার সিকিউরিটি ভালো হবে।
উপসংহার:
মোবাইল ফোন কেনার আগে আপনাকেওপরের সমস্ত কিছু দেখে নিতে হবে , কিন্তু সম্পূর্ণ আপনার মতো ফোন পেতে নাও পারেন। যেমন ৬জিবি RAM এর ফোনে ৫ মেগা পিক্সেলের ক্যামেরা পেতে নাও পারেন। তাই সব কিছু মিলিয়ে একটি ভালো ফোন কিনতে পারেন সাধারণ কাজ করার জন্য।
গেম খেলতে গেলে RAM বেশি হওয়ার প্রয়োজন এবং ভালো প্রসেসর এর প্রয়োজন পড়বে সেই সংগে ভালো ডিসপ্লে হলে গেম খেলতে সুবিধে হবে।