অপারেটিং সিস্টেম কাকে বলে? ব্যাখ্যা । প্রকারভেদ । উদাহরণ

অপারেটিং সিস্টেম, কম্পিউটার অথবা মোবাইল ডিভাইসের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার। এটিকে সিস্টেম সফটওয়্যার (System Software) বলা হয়ে থাকে।

কম্পিউটার মোবাইল ডিভাইস ছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইসে অপারেটিং সিস্টেম থাকে।

এটি একটি সফটওয়্যার যা কম্পিউটিং ডিভাইসের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর সঙ্গে মধ্যস্থতা পালন করে এবং ব্যবহারকারীর দেওয়া ইনপুটকে সিপিইউকে দেয় এবং সিপিইউ দ্বারা আউটপুট কে ব্যবহারকারীকে প্রদান করে। এছাড়াও সম্পূর্ণ ডিভাইসের হার্ডওয়্যার কে কন্ট্রোল করে।

অপারেটিং সিস্টেম কাকে বলে?

অপারেটিং সিস্টেম হলো এমন একটি সফ্টওয়্যার যা একটি কম্পিউটারের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রোগ্রামগুলির প্রক্রিয়াকরণকে নির্দেশ করে

সহজ ভাষায় অপারেটিং সিস্টেম হলো, একটি সফটওয়্যার এটির কাজ হলো ব্যবহারকারী এবং হার্ডওয়্যারের মধ্যে মধ্যস্থতা হিসেবে কাজ করে। ব্যবহারকারীর ইনপুটকে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের (CPU) এর বোঝার জন্য বাইনারিতে কনভার্ট করে এবং CPU দ্বারা বাইনারি আউটপুট কে ব্যবহারকারীর বোধগম্য ভাষায় রূপান্তরিত করে দেখায়।


অপারেটিং সিস্টেমের ব্যাখ্যা

অপারেটিং সিস্টেম হল একটি সফ্টওয়্যার প্রোগ্রাম যা স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, সুপার কম্পিউটার, ওয়েব সার্ভার, গাড়ি, নেটওয়ার্ক টাওয়ার, স্মার্টওয়াচ ইত্যাদির মতো একটি কম্পিউটিং ডিভাইস পরিচালনা ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়। এটি এমন একটি সফটওয়্যার যা কোডিং ভাষা জানার প্রয়োজনীয়তা দূর করে। কম্পিউটিং ডিভাইসের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে। এটি গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) এর একটি স্তর, যা ব্যবহারকারী এবং কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের মধ্যে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে। অধিকন্তু, অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের সফ্টওয়্যার দিক পরিচালনা করে এবং প্রোগ্রামগুলি সম্পাদন নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রসেসর ব্যবস্থাপনা (Processor management):

প্রসেসর যদি কম্পিউটারের হৃদয় হয়, তবে অপারেটিং সিস্টেম মস্তিষ্ক। অপারেটিং সিস্টেম সিদ্ধান্ত নেয় কোন প্রক্রিয়াটি কখন এবং কত সময়ের জন্য করা হবে।

অপারেটিং সিস্টেম একটি মস্তিকের মতো কাজ করে, এবং এটি প্রসেসরকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে অধিক কাজ করতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাজগুলি সম্পাদন করে।

যন্ত্র ব্যবস্থাপনা (Device management):

কম্পিউটার হল হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার একটি সেট। যেকোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করার সময় অপারেটিং সিস্টেম ওই সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।

মেমরি যে কোনো কম্পিউটিং ডিভাইসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার । মেমরি যা প্রোগ্রামটিকে চালু রাখে বা ব্যবহার না করার সময় সক্রিয় থাকে। অপারেটিং সিস্টেম যা মেমরি সংস্থানগুলিকে বিভিন্ন কম্পিউটার প্রোগ্রামে নির্দেশ করে এবং নিরবচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতার জন্য মেমরি পরিচালনা করে।


অপারেটিং সিস্টেমের প্রকারভেদ

  1. Single-tasking and multi-tasking
  2. Single- and multi-user
  3. Distributed
  4. Templated
  5. Embedded
  6. Real-time
  7. Library

১. Single-tasking and multi-tasking operating system:

একটি Single-tasking সিস্টেম একবারে শুধুমাত্র একটি প্রোগ্রাম চালাতে পারে। অর্থাৎ একই সময়ে মাত্র একটি কাজ করতে যখন। ওই কাজটি সম্পূর্ণ হওয়ার পরে নতুন কোনো কাজ করতে সক্ষম। এরকম অপারেটিং সিস্টেমকে সিঙ্গেল টাস্কিং ( Single-tasking) অপারেটিং সিস্টেম বলে।

এবং একটি মাল্টি-টাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম একযোগে একাধিক প্রোগ্রাম চালানোর অনুমতি দেয় । অর্থাৎ অনেকগুলি কাজকে একইসময় একসঙ্গে করতে সক্ষম অপারেটিং সিস্টেমকে মাল্টি টাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম বলা হয়। মাল্টি টাস্কিং অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে প্রত্যেক কাজগুলিকে কয়েক ন্যানো সেকেন্ডে করার পরে অন্য কাজ করা শুরু করে। যার ফলে সমস্ত কাজ একসঙ্গে হয়।

২. Single- and multi-user:

Single user অপারেটিং সিস্টেমে একই সময়ে একজন ব্যবহারকারী ওই সিস্টেমটিকে ব্যবহার করতে সক্ষম। তবে একাধিক প্রোগ্রামকে চালানোর অনুমতি দিতে পারে ।

একটি মাল্টি-ইউজার (multi-user) অপারেটিং সিস্টেমে একসঙ্গে অধিক ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে সক্ষম।

৩. Distributed

Distributed অপারেটিং সিস্টেম স্বতন্ত্র, নেটওয়ার্কযুক্ত কম্পিউটারগুলির একটি গ্রুপ পরিচালনা করে এবং সেগুলিকে একটি একক কম্পিউটার হিসাবে দেখায়, কারণ সমস্ত গণনাগুলি বিতরণ করা হয় (গঠক কম্পিউটারগুলির মধ্যে বিভক্ত)।

৪. Templated

OS এর বিতরণকৃত এবং ক্লাউড কম্পিউটিং প্রসঙ্গে, টেমপ্লেটিং বলতে একটি গেস্ট অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে একটি একক ভার্চুয়াল মেশিনের ছবি তৈরি করাকে বোঝায় , তারপর একাধিক চলমান ভার্চুয়াল মেশিনের জন্য একটি টুল হিসাবে সংরক্ষণ করা । কৌশলটি ভার্চুয়ালাইজেশন এবং ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবস্থাপনা উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় ।

৫. Embedded

এমবেডেড অপারেটিং সিস্টেমগুলি এমবেডেড কম্পিউটার সিস্টেমে ব্যবহার করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ৷  খুব কমপ্যাক্ট এবং ডিজাইন দ্বারা অত্যন্ত দক্ষ, এবং সীমিত পরিমাণ সম্পদের সাথে কাজ করতে সক্ষম। Windows CE এবং Minix 3 হল এমবেডেড অপারেটিং সিস্টেমের কিছু উদাহরণ।

৬. Real-time

রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম হল একটি অপারেটিং সিস্টেম যা একটি নির্দিষ্ট মুহুর্তের মধ্যে ঘটনা বা ডেটা প্রক্রিয়া করার গ্যারান্টি দেয় ।একটি রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেম একক বা মাল্টি-টাস্কিং হতে পারে, কিন্তু মাল্টিটাস্কিং করার সময়, এটি বিশেষ সময়সূচী অ্যালগরিদম ব্যবহার করে যাতে আচরণের একটি নির্ধারক প্রকৃতি অর্জন করা যায়। এই ধরনের একটি ইভেন্ট-চালিত সিস্টেম তাদের অগ্রাধিকার বা বাহ্যিক ইভেন্টগুলির উপর ভিত্তি করে কাজগুলির মধ্যে স্যুইচ করে, যেখানে সময় ভাগ করে নেওয়া অপারেটিং সিস্টেমগুলি ঘড়ির বাধার উপর ভিত্তি করে কাজগুলি পরিবর্তন করে ।

৭. Library

একটি লাইব্রেরি অপারেটিং সিস্টেম হল এমন একটি যেখানে একটি সাধারণ অপারেটিং সিস্টেম যে পরিষেবাগুলি প্রদান করে, যেমন নেটওয়ার্কিং, লাইব্রেরি আকারে প্রদান করা হয় এবং একটি ইউনিকারনেল তৈরি করার জন্য অ্যাপ্লিকেশন এবং কনফিগারেশন কোডের সাথে তৈরি করা হয় : একটি বিশেষ, একক ঠিকানা স্থান , মেশিনের ছবি যেটি ক্লাউড বা এমবেডেড পরিবেশে স্থাপন করা যেতে পারে।


12 সেরা অপারেটিং সিস্টেমের উদাহরণ:

বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত শীর্ষ অপারেটিং সিস্টেমগুলি হলো:

  1. উইন্ডোজ (Windows): মাইক্রোসফট কোম্পানি দ্বারা বানানো সিস্টেম সফটওয়্যার। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটার ল্যাপটপে সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয়।
  2. অ্যান্ড্রয়েড ( android) : এটি মোবাইলের জন্য ব্যবহৃত সিস্টেম সফটওয়্যার। গুগল এর দ্বারা বানানো এই অপারেটিং সিস্টেম।
  3. উবুন্টু (Ubuntu) : এটিও কম্পিউটারে ব্যবহার করা অপারেটিং সিস্টেম। এটি ওপেনসোর্স সফটওয়্যার , তাই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। উবুন্টু হলো লিনাক্স base অপারেটিং সিস্টেম।
  4. ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম (MAC operating system): এটি আপেল কোম্পানির ল্যাপটপ এবং ডেস্কটপের মধ্যে থাকে।
  5. KaiOS: KaiOS হল একটি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, যা লিনাক্সের উপর ভিত্তি করে , কীপ্যাড ফিচার ফোনের জন্য। এটি KaiOS Technologies (Hong Kong) Limited দ্বারা তৈরি; হংকং ভিত্তিক একটি কোম্পানি, যার বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হচ্ছে চীনা বহুজাতিক ইলেকট্রনিক্স সমষ্টি TCL কর্পোরেশন।
  6. ফেডোরা (Fedora)
  7. সোলারিস (Solaris)
  8. ফ্রি বিএসডি (Free BSD)
  9. ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম (Chrome OS)
  10. সেন্ট অপারেটিং সিস্টেম (CentOS)
  11. ডেবিয়ান (Debian)
  12. ডিপিন (Deepin)
শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *