তাপ কাকে বলে? চিহ্ন, একক, প্রকার, বোধগম্য তাপ, লীন তাপ, বিকীর্ণ তাপ

  • তাপ এক রকম বাহ্যিক শক্তি, যা গ্রহণ করলে ঠান্ডা বস্তু উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং গরম বস্তু বর্জন করলে ঠান্ডা হয়ে যায়।
  • তাপ একপ্রকার শক্তি যা কোনো বস্তু গ্রহণ করলে ওই বস্তুর তাপমাত্রা (উষ্ণতা) বৃদ্ধি পায় অথবা বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন হয়।

তাপ সৃষ্টি করতে হলে শক্তির প্রয়োজন হয়। শক্তির অবিনশ্বরতা সূত্রে দেখা যায় যে, তাপ সৃষ্টির জন্য যে শক্তি ব্যয়িত হয় সেই শক্তি নষ্ট না হয়ে তাপে রূপান্তরিত হয়। এজন্য তাপকে একরকম শক্তি বলা হয়।

শক্তির একটি রূপ হিসাবে তাপকে অন্য শক্তিতে রূপান্তর করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মোটর চালিত যানবাহনে, তাপ যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বৈদ্যুতিক বাল্বে, এটি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে, এটি অবশেষে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

তাপ এবং তাপমাত্রা এক নয়। তাপমাত্রা হলো বস্তুর তাপীয় অবস্থা।

তাপের চিহ্ন কি?

আমরা তাপকে Q দ্বারা চিহ্নিত করি।

তাপের একক কি?

  • CGS পদ্ধতিতে তাপের একক ক্যালোরি (Calorie)
  • SI পদ্ধতিতে তাপের একক জুল (Joules)
  • FPS পদ্ধতিতে তাপের একক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (British Thermal Unit সংক্ষেপে BTU)

তাপের প্রকারভেদ

তাপকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়

  1. বোধগম্য তাপ
  2. লীন তাপ
  3. বিকীর্ণ তাপ

১. বোধগম্য তাপ কাকে বলে?

অবস্থার পরিবর্তন না ঘটিয়ে কোন বস্তুর উপর যে তাপ প্রয়োগ করলে বস্তুর তাপমাত্রা বেড়ে যায়, সেই তাপকে বোধগম্যতা বলে।

তাপমাত্রার এই পরিবর্তন থার্মোমিটারে ধরা যায়।

উদাহরণ:

  • ধরুন আপনি লোহাকে তাপ দিচ্ছেন এবং লোহা গরম হচ্ছে। কিন্তু লোহার অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনা।
  • ধরুন, আপনি সূর্যের আলো থেকে তাপ গ্রহণ করছেন, এবং আপনার অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটনা। শুধু আপনার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি বোধগম্য , এই কারণেই এই তাপকে বোধগম্য তাপ বলা হয়।

২. লীন তাপ কাকে বলে?

যে তাপ বস্তুর উপর প্রয়োগ করলে বস্তুর উষ্ণতা না বেড়ে বস্তুর অবস্থান পরিবর্তন ঘটে তাকে লীন তাপ বলে।

এই তাপ থার্মোমিটারে ধরা পড়ে না।

উদাহরণ:

  • আমাদের ভিজে হাত শুকিয়ে যাওয়ার সময় হাতে থাকা পানি শরীরের থেকে লিনতাপ নিয়ে বাষ্পীভূত হয়।
  • গরম পাত্রে যদি একফোঁটা জল ফেলেন তাহলে ওই পানি ওই পাত্র ঠিক লিনতাপ গ্রহণ করে বাষ্পীভূত হয়। অর্থাৎ এখানে তাপ গ্রহণ করার ফলে পানির অবস্থার পরিবর্তন হয়।

এই কারণেই এই তাপকে থার্মোমিটার দিয়ে ধরা যায়না।

৩. বিকীর্ণ তাপ কাকে বলে?

যে তাপ কোনো উৎস থেকে বিকিরণ প্রণালীতে (মাধ্যম ছাড়া অথবা মাধ্যম থাকলেও তাকে উত্তপ্ত না করে) সঞ্চালিত হয়, তাকে বিকীর্ণ তাপ বলে ।

অর্থাৎ যে তাপ জড় মাধ্যম ছাড়া অথবা মাধ্যম থাকলেও মাধ্যমকে উত্তপ্ত না করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয়, তাকেই বিকীর্ণ তাপ বলে।

উদাহরণ:

সূর্য থেকে যে তাপ পৃথিবীতে আসে তা হলো বিকীর্ণ তাপ।


কিভাবে আলোর মাধ্যমে তাপ স্থানান্তরিত হয়?

যখন দৃশ্যমান আলো কোনো বস্তু দ্বারা শোষিত হয়, তখন বস্তুটি ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকে দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাপে রূপান্তরিত করে । এর ফলে বস্তুটি উষ্ণ হয়।

তাপের গতীয় মতবাদ কি?

এই মতবাদ অনুসারে পদার্থের অনুগুলির গতিশক্তিই হল বস্তুর তাপ শক্তির পরিমাণ । তাপ হলো পদার্থের অণুগুলোর গতির সাথে সম্পর্কযুক্ত এমন এক প্রকার শক্তি, যা কোনো বস্তু ঠান্ডা না গরম তার অনুভূতি জন্মায়।
শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *