ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য, পরিধি, গুরুত্ব

ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোম্পানি এবং সংস্থাগুলির কার্যকর ব্যবস্থাপনা (Management) প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনার(Management এর) বিভিন্ন স্তর রয়েছে যার লক্ষ্য একটি কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যগুলিকে সংগঠিত করা এবং সমন্বয় করা।

ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?

প্রতিষ্ঠানিক লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপক যে সকল কার্যাবলী (পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নেতৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ) সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে থাকে তার সমষ্টিকে ব্যবস্থাপনা বলা হয়

অর্থাৎ,সংস্থানগুলিকে দক্ষতার সাথে এবং কার্যকরভাবে ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলি অর্জনের জন্য মানুষকে একত্রিত করার কাজ।

ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য:

ব্যবস্থাপনার সাধারণত ৩ টি উদ্দেশ্য থাকে।

১. সাংগঠনিক উদ্দেশ্য

সাধারণত, একটি সংস্থার প্রাথমিক লক্ষ্য তার মানবিক, বস্তুগত এবং আর্থিক সম্পদ ব্যবহার করে বৃদ্ধি অর্জন করা

ব্যবস্থাপনার কর্মচারী, গ্রাহক এবং সরকার সহ সমস্ত কোম্পানির স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ বিবেচনা করা উচিত। সংস্থার লক্ষ্য নির্ধারণ এবং অর্জনের জন্য পরিচালকরা দায়ী। । যে কোনো কোম্পানির জন্য তিনটি সাধারণ সাংগঠনিক উদ্দেশ্য আছে:

  1. Survival অর্থাৎ কোম্পানিকে টিকিয়ে রাখা।
  2. লাভ (Profit)
  3. বৃদ্ধি

২. সামাজিক উদ্দেশ্য

ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য তাদের কাজের মাধ্যমে সমাজের জন্য সুবিধা তৈরি করার জন্যও দায়ী। কোম্পানিগুলি বিভিন্ন উপায়ে এটি করতে বেছে নেয়। পরিবেশ বান্ধব উৎপাদন

৩. কর্মীদের উদ্দেশ্য

ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য কর্মচারীকে ন্যায্য মজুরি , স্বাস্থসেবা, কর্মীদের সামাজিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ, শিক্ষার সুযোগ সুবিধা, প্রদান করা।


ব্যবস্থাপনার পরিধি কি?

পরিধি ব্যবস্থাপনা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ফলাফল, ফলাফল এবং সুবিধাগুলি চিহ্নিত, সংজ্ঞায়িত এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয় । ‘পরিধি’ হল উত্পাদন, ফলাফল এবং সুবিধাগুলির সামগ্রিকতা এবং সেগুলি উত্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজের উল্লেখ করার জন্য প্রকল্পগুলির পরিচালনায় ব্যবহৃত শব্দ।


ব্যবস্থাপনার পাঁচটি সুবিধা কী কী?

ব্যবস্থাপনা করা হল পূর্বাভাস এবং পরিকল্পনা করা, সংগঠিত করা, আদেশ দেওয়া, সমন্বয় করা এবং নিয়ন্ত্রণ করা।ব্যবস্থাপনাকে পাঁচটি কাজের প্রক্রিয়া হিসাবে বর্ণনা করেছেন যেমন

  1. পরিকল্পনা
  2. সংগঠিত
  3. আদেশসূচক
  4. সমন্বয়
  5. নিয়ন্ত্রণ

ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব

১. লক্ষ্য অর্জন : কার্যকরী ব্যবস্থাপনা ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাকে একটি সাধারণ দিকনির্দেশনা দেয় এবং একটি প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জনের দিকে নির্দেশনা দেয়।

২. একটি গতিশীল সংস্থা তৈরি করে: ম্যানেজমেন্ট তার কর্মীদের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে যাতে সংস্থাটি তার প্রতিযোগিতামূলক প্রান্ত বজায় রাখে। একটি প্রতিষ্ঠান কতটা ভালোভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে এবং পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারে তার সাফল্য এবং ব্যর্থতার মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে পারে।

৩. দক্ষতা বৃদ্ধি : দক্ষতা খরচ কমায় এবং একটি প্রতিষ্ঠানের কাজের সকল ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।

৪. ব্যবসার উপকরণাদির উন্নয়ন : ব্যবসা-বাণিজ্যে ছয়টি উপকরণ রয়েছে। এগুলো 6 M নামে পরিচিত। এগুলো যথাক্রমে-

  • Man (মানুষ)
  • Material (কাঁচামাল)
  • Machine (যন্ত্রপাতি)
  • Money (অর্থ)
  • Method (পদ্ধতি)
  • Marketing (বিপনণ)

দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই উপকরণাদি সংগৃহীত, একত্রিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।

৫. মানব ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন: ব্যবস্থাপনার সাহায্যে মানুষের প্রচেষ্টা সমন্বিত হয এবং কাজের উৎসাহ পাওয়া যা। এতে স্বতঃস্ফূর্ত কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হয় যা অর্থনীতির অনুকূল পরিবর্তন সাধন হবে।

৬. ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য অর্জনে সাহায্য করে: কার্যকরী ব্যবস্থাপনা দলগত মনোভাব, সহযোগিতা এবং একটি গোষ্ঠী হিসাবে সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রুতি বৃদ্ধি করে, যা প্রতিটি মেয়াদী সদস্যকে তাদের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করে।

৭. শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা : কোনো প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে চলতে গেলে শৃঙ্খলা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সকল কর্মী উপকরণের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও ভারসাম্য স্থাপন করা।

৮. উৎপাদনের উপকরণাদির সুষ্ঠু ব্যবহার:প্রতিষ্টানের সমস্ত উপকরণগুলি, শ্রমিককে সঠিকভাবে ব্যবহার করাই হলো একজন ব্যবস্থাপকের দ্বারা দক্ষ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন।

৯. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি : দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের ফলে অধিক পরিমান কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

১০. অপচয় হ্রাস: ব্যবস্থাপনার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে অপচয় রোধ করা। সমস্ত উপকরণ, কর্মী এবং সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অপচয় কম করে। যার ফলে প্রতিষ্ঠানের অপচয় খরচ কম হয় এবং বেশি মুনাফা হবে।

১১. সম্পর্ক উন্নয়ন : ব্যবস্থাপনা মালিক, শ্রমিক, ক্রেতা বা ভোক্তা এবং বিদেশি উদ্যোক্তাদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১২. নেতৃত্ব প্রদান :উত্তম ব্যবস্থাপনা হচ্ছে নেতৃত্বের গভীরতা ও প্রসারতার বহিঃপ্রকাশ। ব্যবস্থাপনা ব্যতীত কোন মতবাদ, দলীয় কার্যাবলী উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক হয় না।

১৩. গবেষণা ও উন্নয়ন : বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যে জ্ঞান আবিষ্কার করে দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণেই তাকে বাস্তবে রূপদান ও এর সুফল জনগণের দ্বারে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে।

১৪. সামাজিক উন্নয়ন: ব্যবস্থাপনা সমাজে একদল দক্ষ লোক সৃষ্টি করে। এভাবে বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে পৃষ্ঠপোষতা প্রদানকরে সামাজিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১৫. জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন: মানুষের মাথাপিছু আয় ও ভোগের উপর জীবনযত্রার মান নির্ভর করে। এজন্য কর্মসংস্থান, পনোন্নতি, আর্থিক উন্নয়ন, সুলভে পণ্য বন্টন, উৎপাদন বৃদ্ধি, কমমূল্যে উন্নত মানের পণ্য সরবরাহ ও তা সহজ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করে ব্যবস্থাপনা মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *