বর্তমানে মানুষ আছেন যাদের অনলাইন গেম গুলির প্রতি আসক্তি রয়েছে, এরফলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।
নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন যখন অনলাইন গেমটি খেলা হয়।
এরকম অনেকেই আছেন যারা সারাদিন শুধু মাত্র মোবাইলে অনলাইন গেম খেলতে থাকে।
এগুলি নিয়েই আজকে আমি বিস্তারিত আলোচনা করব এবং আপনাদের কিছু ধারণা দেবো শেষে কিছু টিপস দেব যা অনুসরণ (Follow) করে অনলাইন Game কি ছাড়তে পারবেন।
Game এর আসক্তির লক্ষণ গুলি:
- সারাক্ষণ মোবাইল, কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপে গেমটি খেলতে থাকা।
- সারাক্ষণ গেমটি নিয়ে ভাবা।
- কিভাবে আরো ভালো খেলবেন এগুলি নিয়ে চিন্তা করা।
- নিজের হাত ও শরীর এমনিতেই গেমের ।
প্রায়ই এরকম কিছু লক্ষণ দেখা যায়।
গেমের ক্ষতিকর দিকগুলি
এই খেলাগুলো, জানতে অজান্তে আমাদের অনেক ক্ষতি করে দেয়, যা আমরা টের পর্যন্ত পাইনা।
তাই আমাদের অবশ্যই জানা উচিত , অনলাইনে গেমগুলি আপনার কি কি ক্ষতি করে:
সময়:
এই খেলায় আপনার প্রচুর সময় নষ্ট হয়। যার ফলে অন্য কোনো কাজ করা হয় না।
খেলার সময় আমাদের মন এমন ভাবে খেলার মধ্যে ঢুকে যায় । যার ফলে আমরা বুঝতেই পারিনা কিভাবে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের জিবনে সময়ের গুরুত্ব অপরসীম , আর ওই সময় আমরা যদি শুধুমাত্র গেম খেলেই কাটিয়ে দিই। তা খুব একটা ভালো কথা নয়।
ভবিষ্যত:
আমি আগে খুবই Game খেলতাম , একপ্রকার নেশা হয়ে গিয়েছিলো। সারাদিন ওই গেম খেলা নিয়েই ব্যাস্ত থাকতাম।
সারাদিন গেম খেলার জন্য, ভবিষ্যতের কথা ভুলেই যেতাম। বিশেষ করে যারা পড়াশুনোর করছেন কিংবা যারা পড়াশুনোর শেষে কাজ খুঁজছেন।
অথবা আপনি যদি ভবিষ্যতে কিছু করতে চান। এরকম মানুষকে এই গিমগুলি ভীষণ ক্ষতি করছে। অজান্তেই নিজের ভবিষ্যতের কিছু করার ইচ্ছা কে ভুলিয়ে দিচ্ছে এই খেলাগুলো।
শারীরিক ক্ষতি:
শরীর ঠিক আছে এর থেকে খুশির কি হতে পারে। কিন্তুু এই শরীরকে যখন কোনো গেম খেলার জন্য নষ্ট হয়। টা মোটেও ভালো কথা নয়।
বিশেষ করে চোখ ও মস্তিষ্কের খুব সমস্যা দেখা যায়।
বেশি গেম খেললে,মোবাইল, কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপের আলো আমাদের চোখের ক্ষতি করে।
মোবাইল , কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ থেকে ব্লু লাইট (Blue Light) বেরোয় যা আমাদের চোখের পক্ষে ক্ষতিকর।
আর ওই মোবাইল যখন সারাদিন ব্যবহার করি তখন চোখের মধ্যে ব্লু লাইট (Blue Light) এসে পড়ে যার ফলে
- মাথার যন্ত্রণা
- মেজাজ খিটখিটে
- দৃষ্টি শক্তি কমে যায়।
- ইত্যাদি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
সোজা কথায় বলতে গেলে, চোখের ১২ টা বেজে যায়😂।
আর মানসিক ভাবে যা ক্ষতি হয় সেগুলি হলো,
- অনেক কম বয়সের বাচ্চাদের তো মানসিক বিকৃতি পর্যন্ত এসেছে। অর্থাৎ মাথা কোনো কাজ করছে না।
- বেশি খেলার জন্য, করো সঙ্গে কথা না বলা, চুপচাপ থাকা।
- একা থাকতে ভালো লাগা।
- সবসময় গেমটি নিয়ে চিন্তা করা।
- খেলতে হেরে গেলে হতাশ হওয়া।
- নার্ভের সমস্যা হতে পারে, যার ফলে হাতের কাপুনি হতে পারে।
টাকা ব্যয়:
ওই গেম টি খেলতে গেলে ইন্টানেটের জন্য খরচ করে থাকি।
এছাড়াও নতুন ফোন কেনার জন্য টাকা খরচ করে থাকি , দামি ফোন কেনার জন্য যেটি ব্যবহার করে সহজেই গেমটি খেলা সম্ভব।
আমাদের কাছে যা স্মার্টফোন থাকে ওর মাধ্যমে সমস্ত সাধারণ কাজই করা সম্ভব হয়ে থাকে।
কিন্তুু গেম খেলতে গেলে, আরো ভালো প্রসেসর ও RAM এর ফোনের দরকার হয়।
তাই পুরনো ফোনের পরিবর্তে নতুন ফোন কেনার প্রয়োজন হয়। শুধুমাত্র গেমটি খেলার জন্য।
এছাড়াও গেমটি খেলতে গিয়ে ও খরচ করা হয়ে থাকে। যারা গেমটি বানিয়েছেন ওনারা তো আর ফ্রী তে করেনি । গেমের মধ্যে এমন অনেক জিনিস আছে যা দরকারী। এবং ঐগুলি কিনতে গেলে টাকা লাগবে।
যদিও ফ্রী তে গেম খেলা যায়। কিন্তুু যারা খুব বেশি Game খেলেন , ওনাদের ওই জিনিসগুলি কেনার জন্য আকর্ষিত করবে। যার ফলে কিনেই থাকে।
তাই গেমটি খেলতে গিয়ে ও অনেক টাকা ব্যয় হয়ে থাকে।
আমি কিভাবে Online Game ছেড়েছিলাম
আমি আগে মোবাইলে গেম খেলতে খুব একটা আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তুু আমার হোস্টেলে থাকা কিছু ছেলে খেলতো।
একদিন ওরা আমায় খেলতে বললো। আমিও মোবাইলে ইনস্টল (install) করে খেলতে শুরু করেছিলাম।
কিন্তুু, প্রথম প্রথম ভালো খেলতে পারতাম না , এর জন্য আমার খুব একটা ভালো লাগতো না।
যেজন্য, আমাকে বাকি যারা খেলছিল , ওরা আমায় খেলাটি ভালো করে শিখিয়ে দিল।
এরপর থেকে খুব মজা পেলাম , আর আরো বেশি করে অভ্যাস করতে শুরু করলাম । যাতে আরও ভালো খেলতে পারি।
কিন্তুু, বুঝতেই পারতাম না কিভাবে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।
অনেকদিন খেলার পর গেমটি যাতে আরও ভালো খেলতে পারি , এরজন্য টাকা দিয়ে অনেক কিছু কিনতে শুরু করলাম।
বুঝতেই পারিনি কিভাবে সারাদিন অনলাইনে ভিডিও Game খেলতাম।
এরপর একদিন বাড়ি এলাম ,, বাড়িতে ইন্টারনেটের স্পিড খুব একটা ভালো নয়। যার ফলে খেলতে অসুবিধে হতো। এছাড়াও বাড়িতে সারাদিন মোবাইল ব্যবহার করলে বকাবকি শুনতে হবে।
এরফলে খুব একা একা লাগলো। একা থাকার জন্য মাথার মধ্যে ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। আর এটাও মাথায় ঢুকতে শুরু করলো যে আমি অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছি মোবাইলের Game খেলে।
কিন্তুু এরপরও মোবাইলে রাতের দিকে খেলতাম। প্রায়ই ইন্টানেটের সমস্যার জন্য গেমটি চলতো না।
যার ফলে বেশি খেলতাম না, এভাবে খেলার প্রতি আসক্তি কমে গেলো।
যদিও প্রায়ই খেলতাম , রাতের দিকে। কিছুদিন পরে মনে হলো ওই গেমের জন্য আমার পড়াশুনো নষ্ট হচ্ছে।
আমি সেজন্য uninstall করে ফেললাম। আবার ১ দিন পরে ইনস্টল করলাম।
এবং খেলার পরে প্রায়ই uninstall করতাম। যার ফলে প্রতিদিন ডাউনলোড করা সম্ভব হতো না।
এভাবে ধীরে ধীরে গেমটির নেশা মুক্ত হয়েছি।
১ বছর পেরিয়ে গেলো কিন্তুু আজও আমার ওই গেমটি খেলতে ইচ্ছে করে। কিন্তুু ভবিষ্যত ও শরীর অনেক বেশি দামী ওই গেমের তুলনায়।
তাই মন চাইলেও মোবাইলে কোনো অনলাইনে ভিডিও গেম ইন্সটল করিনা।
অনলাইনে Game ছাড়ার কিছু টিপস
যারা গেমটি খেলে ওদের থেকে দূরে থাকুন:
যারা গেমটি খেলে ওদের সঙ্গে থাকলে , আমি ওই Game সমধ্যে অনেক কথা শুনতে পাবেন।
এরফলে আপনি আবার ওই গেমের নেশায় পড়বেন।
মোবাইল ছেড়ে থাকুন:
চেষ্টা করুন আপনি মোবাইল কে যত কম ব্যবহার করার। এরজন্য মোবাইল কে হাতের সামনে রাখবেন না।
চেষ্টা করবেন আপনার থেকে দূরে মোবাইল টি রাখতে।
ব্যস্ততা:
আপনি যদি ব্যস্ত (Busy) থাকেন তাহলে খুব সহজেই গেমের নেশা মুক্ত হবে।
নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন, তাহলে মোবাইল নিয়ে খেলতে ভুলেই যাবেন।
ইনস্টল ও আনইনস্টল:
যদি খেলার জন্য খুব মন করে, তাহলে Gameটি খেলার পর সঙ্গে সঙ্গে uninstall করুন।
এরফলে , যখন তখন Game টি খেলতে পারবেন না। খেলতে হলে ইনস্টল করতে হবে যার জন্য অনেক সময় লাগবে ।
বেশিরভাগ সময় দেখা গেছে, যদি ফোনের মধ্যে গেমটি থাকে , তাহলে আমাদের হাতটি চলে যায় । এবং গেমটি খেলতে শুরু করি।
উপসংহার
আশাকরি আপনি আমার কথাগুলি মন দিয়ে পড়েছেন। আপনি যদি Game Addicted হন।
তাহলে অনুসরণ করুন , এই কথাগুলি। কারণ আপনি যদি ছাড়তে না চান তাহলে কেউ ছাড়াতে পারবে না।