SSD ও HDD এর মধ্যে পার্থক্য? কোনটি সবথেকে ভালো?

SSD ও HDD এর মধ্যে পার্থক্য?

আমরা যখনই ল্যাপটপ কিম্বা কম্পিউটার কিনতে যাই SSD এবং হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (HDD) এর নাম শুনছি। অথবা যারা কম্পিউটার ব্যাবহার করে এদের প্রত্যেকেই হার্ডডিক্স এর নামটা শুনেছি।

HDD এবং SSD খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যা আপনার যারা উচিত যদি আপনি ল্যাপটপ কম্পিউটারে কাজ করেন অথবা ল্যাপটপ কম্পিউটার কিনতে চান।

তাই এই আর্টিকেল টি সম্পূর্ণ ভাবে পড়ুন, সব কিছু পরিষ্কার ভাবে জানার জন্য। যাতে এটি পড়ার পর আপনার মনের মধ্যে আর কোনো সংশয় থাকবে না।


HDD ও SSD কি?

HDD এর পুরো নাম হলো হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (Hard disk drive)। সংক্ষেপে আমরা হার্ড ডিস্ক ও বলে থাকি।

হার্ড ডিস্ক হলো আমাদের কম্পিউটারের সেকেন্ডারি স্টোরেজ সিস্টেম।

প্রাইমারি স্টোরেজ হলো RAM যা কম্পিউটারের সমস্ত কাজ কে স্টোর করে রাখে কম্পিউটার চলাকালীন।

সেকেন্ডারি স্টোরেজ এর অৰ্থ হলো এটি আমরা কোনো কাজ , কোনো ফাইল save করে রাখতে পারি। কম্পিউটার বন্ধ করে দেওয়ার পরও এটি সেকেন্ডারি স্টোরেজ এর মধ্যে সঞ্চিত থাকে।

এর ফলে যখন আমরা কম্পিউটারে অন করি এবং কম্পিউটারে সঞ্চিত সমস্ত ডাটা ফাইল সব দেখতে পাই।

উদাহরণ হিসেবে, যখন আমরা কোনো কাজ করি কম্পিউটারে যেমন paint এ কোনো ছবি আঁকছি ডিজাইন করছি এগুলো কম্পিউটারে RAM এর মধ্যে সঞ্চিত থাকে। যদি ওই অবস্থায় কম্পিউটার বন্ধ করে দিই তাহলে আমরা যা পেইন্ট এ ছবি একেছিলাম ওগুলো মুছে যাবে।

এবং যখন আমরা যদি ঐ ফাইল টি সেকেন্ডারি স্টোরেজ এর মধ্যে save করে রেখে দিই তাহলে কম্পিউটার বন্ধ করার পরেও ওখানে save হয়ে থাকবে। পরবর্তী কালে আমরা যখন কম্পিউটার on করবো তখন ওই সঞ্চিত ছবি টি সেকেন্ডারি স্টোরেজ থেকে দেখতে পাবো।

এবং হার্ড drive হলো প্রথম আবিষ্কৃত সেকেন্ডারি স্টোরেজ। কিন্তুু ধীরে ধীরে টেকনোলজি উন্নত হয়েছে এবং SSD নামক একটি নতুন সেকেন্ডারি স্টোরেজ আবিষ্কৃত হয়েছে ।

SSD এর পুরো নাম হলো solid state drive (সলিড স্টেট ড্রাইভ)। এটিও হার্ড ডিস্ক এর মতো একটি সেকেন্ডারি স্টোরেজ সিস্টেম।

কিন্তুু SSD এর মধ্যে সবথেকে সুবিধা হলো স্পীড। SSD HDD এর তুলনায় অনেক দ্রুত।

আপনি যদি SSD ব্যাবহার করেন আপনার কম্পিউটারে, তাহলে কম্পিউটার আগের তুলনায় খুবই fast হয়ে যাবে।

এছাড়াও অনেক সুবিধা আছে যা আমরা পার্থক্যের মধ্যে দিয়ে জানবো।


হার্ড ডিস্ক কিভাবে কাজ করে?

HDD এর পুরো নাম হলো হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ । নামের মধ্যেই আপনি বুঝতে পারছেন এর মধ্যে কোনো ডিস্ক থাকে।

হার্ড ডিস্ক কিভাবে কাজ করে

হার্ড ডিস্কের মধ্যে একটি ম্যাগনেটিক চাকতি (ডিস্ক), মোটর এবং লেজার লাইট থাকে। ম্যাগনেটিক ডিস্কের অপর সমস্ত রকমের ডেটা সঞ্চিত থাকে। ডাটা save করে জন্য লেজার লাইট ব্যাবহার করা হয়।

ওই লেজার লাইট এর হেড টি ডিস্কের ওপর ফাইল সেভ করতে সক্ষম।

মোটর এর কাজ হলো ডিস্ক কে ঘোরানো। যার ফলে ডিস্কের সমস্ত জায়গাতেই লেজার লাইট ডাটা save করতে পারে।

যখনই ওই ডাটা আমরা দেখতে চাই। যেমন ভিডিও দেখা কিংবা গান শোনার জন্য ফাইল টি open করি। তখন ডিস্কটি ঘুরতে থাকে। এবং সঠিক থাকে সঞ্চিত থাকা ডাটা কে লেজার লাইট পড়তে পারে। যার ফলে ওই ডাটা গুলো আমরা দেখতে পাই। অর্থাৎ গান শুনতে , ভিডিও দেখতে এবং সমস্ত রকম ডাটা দেখতে পারি।

মোটর এবং বাকি সমস্ত অংশগুলো মেকানিকাল অংশ। কোনো ডাটা দেখতে হলে মোটর টি ঘোরা শুরু করে। এর জন্য কম্পিউটারে যেকোনো কাজ করতে গেলে একটু দেরি হয়।

কিম্বা কোনো ডাটা save করতে গেলেও সময় একটু বেশি সময় লাগে এর কারণ হলো চাকতি টি ঘুরবে এবং লেজার লাইট ডাটা save করবে। এর জন্য কিছুটা সময় বেশি লাগে।

HDD এর সুবিধা

  • হার্ড ডিস্ক এর সুবিধা হলো একটি তুলনামূলকভাবে সস্তা
  • সহজেই বেশি স্টোরেজ এর HDD পাওয়া যায়।

HDD এর অসুবিধা

  • এটির মধ্যে মেকানিকাল পার্টস নড়াচড়ার মাধ্যমে ডেটা read ও write করা হয়। তাই HDD ব্যাবহার করলে কম্পিউটার খুবই slow চলে।
  • কোন কারণে হাত থেকে পড়ে গেলে অথবা একটু ধাক্কা খেলে হার্ড ডিস্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে।
  • হার্ড ডিস্ক এর লাইফ ৫-৬ বছরই চলে। অর্থাৎ কম দিন টিকে।
  • ইলেকট্রিক power খুবই বেশি নেয়। যার ফলে ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ কম হয়।

SSD কিভাবে কাজ করে?

SSD এর পুরো নাম সলিড স্টেট ড্রাইভ। নামের মধ্যেই আপনি বুঝতে পারছেন এটি শুধু সলিড স্ট্রেট ড্রাইভ।

অর্থাৎ এর মধ্যে কোনরকম কোনো কোনো ডিস্ক থাকে না, এছাড়া কোনো নড়াচড়ার মতোও কোনো অংশ থাকে না।

এর মধ্যে মাইক্রো চিপ থাকে যার মধ্যে ডাটা স্টোর করে রাখে।

এর জন্যই SSD খুবই ফাস্ট হয় HDD এর তুলনায়।

SSD এর সুবিধা

  • এটি খুবই ফাস্ট হয়। ল্যাপটপ কম্পিউটারে ব্যাবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে।
  • ধাক্কা খেলে কিম্বা হাত থেকে পড়ে গেলেও খারাপ হওয়ার চান্স খুবই কম থাকে।
  • লাইফ খুবই বেশি 10 বছর পর্যন্ত SSD এর পর্যন্ত ডাটা স্টোর করে রাখতে পারে খারাপ হওয়া ছাড়াই। যদি বেশি ব্যাবহার করেন তাহলে লাইফ কিছুটা কম হবে। কিন্তুু লাইফ অনেক বেশি HDD এর তুলনায়।
  • কোনো মেকানিকাল পার্টস থাকে না, শুধুমাত্র মাইক্রো চিপ থাকে। এর ফলে ইলেকট্রিক power খুবই কম নেয়। এবং ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ব্যাটারি ব্যাকআপ অনেক বেশিক্ষণ দেয়।

SSD এর অসুবিধা

  • স্টোরেজ এর size কম হয়। বর্তমানে মার্কেট এ 4TB এর ওপরে SSD পাওয়া যায়না।
  • দাম অনেকটাই বেশি HDD এর তুলনায়।

HDD এবং SSD এর মধ্যে পার্থক্য

1. স্পীড (speed)

  • হার্ড ডিস্ক ধীরে (slow) হয়।
  • সলিড ডিস্ক খুবই ফাস্ট হয় এটি 5 থেকে 20 গুন ফাস্ট হয় HDD এর তুলনায়।

2. power

  • বৈদ্যুতিক power HDD তে বেশি লাগে । কারণ অনেক মেকানিকাল পার্টস আছে।
  • সলিড স্টেট ড্রাইভ এ কম power লাগে। কারণ এখানে শুধু মাইক্রোচিপ থাকে।

3. জীবনকাল

  • হার্ড ড্রাইভ এর জীবনকাল 5 বছর পর্যন্ত হয়। এটি নির্ভর করে আপনি কোন ব্যাবহার করছেন। কম ব্যবহার করলে বেশি দিন চলবে।
  • সলিড স্ট্রেট ড্রাইভ এর জীবনকাল 10 বছর পর্যন্ত। এর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার বেশি ব্যাবহার করলে কম দিন চলবে। কম ব্যবহার করলে বেশি দিন চলবে।

4. খারাপ হওয়ার আশঙ্খা

  • হাত থেকে পড়ে গেলে কিম্বা কোন রকম কোন ধাক্কা খেলে হার্ডডিক্স খারাপ হয়ে যেতে পারে। কারণ এর ভেতরে ডিস্ক থাকে, লেজার হেড থাকে তাই ধাক্কা লাগল ওগুলি খারাপ হয়ে যাওয়া সম্ভবনা অনেক বেশি। বেশিরভাগ সময় খারাপ হয়েই যায়।
  • সলিড স্ট্রেট ড্রাইভ এ কোনো মেকানিক্যাল পার্টস থাকেনা তাই হাত থেকে পড়ে গিয়ে ওগুলি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে তাই যে সাধারনত সলিড স্ট্রেট ড্রাইভ কম খারাপ হয় ধাক্কা লাগার পরেও।

5. দাম

  • দাম অনেকটাই কম SSD এর তুলনায়
  • দাম অনেকটাই বেশি HDD এর তুলনায়। বর্তমানে 240 GB সলিড স্ট্রেট ড্রাইভ এর দাম 3- 4 হাজার টাকার মতো। যেখানে 1 TB হার্ড ডিস্ক হয়ে যাবে ওই টাকায়।

1 TB SSD এর দাম আলাদা আলাদা হয় কেনো?

একই স্টোরেজ এর SSD এর দাম আলাদা আলাদা হওয়ার কারণ হলো cache মেমোরি।

দামি ssd এর cache অনেক বেশি থাকে। বেশি cache থাকলে বেশি ফাস্ট হয় SSD স্টোরেজ।

কমদামী SSD এর cache মেমোরি এর পরিমাণ কম থাকে। তাই দামের পার্থক্য দেখা যায়।


কোন সাইজ এর SSD কিনবেন?

যত বেশি স্টোরেজ এর SSD স্টোরেজ কিনবেন তত বেশি Cache মেমোরি থাকবে।

উদাহরণ হিসেবে, যদি আপনি 1TB স্টোরেজ কেনেন তাহলে 200GB পর্যন্ত cache মেমোরি পাওয়া যেতে পারে । এটি নির্ভর করে কতদামি SSD কিনছেন।

আবার 120 জিবি স্টোরেজ কিনলে তাহলে 20জিবি পর্যন্ত cache পাওয়া যেতে পারে।

cache মেমোরি খুবই ফাস্ট তাই 20GB এর cache মেমোরি ফুল হয়ে গেলে SSD এর বাকি মেমোরি কিছুটা ধীরে চলে। তাই দামি ও বেশি স্টোরেজ এর SSD কিনলে বেশি ফাস্ট হয়।


উপসংহার

সব দিক থেকেই SSD এর সুবিধা আছে শুধু দাম আর স্টোরেজ সাইজ 4TB পর্যন্ত মার্কেটে পাওয়া যায় বর্তমানে। এছাড়া সবক্ষেত্রেই এসএসডি ভালো। (4 টিবি যথেষ্ট যারা ভিডিও এডিট করে ওনাদের জন্য এবং অনেক বেশি সাধারণ কাজের ক্ষেত্রে)।

এছাড়া আপনি SSD এবং HDD একসঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে এসএসডি এর মধ্যে আপনি সিস্টেম সফটওয়ার কে ইনস্টল করে রাখবেন।

এবং HDD এর মধ্যে ভিডিও, গান , কিম্বা কোনো ফাইল। এতে আপনার কম্পিউটার ফাস্ট হবে কাজ করার সময়।

যদি আপনার ল্যাপটপে DVD ড্রাইভ slot তাহলে তাহলে ওই জায়গায় DVD এর পরিবর্তে SSD লাগানো যেতে পারে। তাহলে SSD এবং HDD দুটো একসঙ্গেই চলবে। DVD ড্রাইভার এর জায়গায় SSD ইনস্টল করতে গেলে একটি DVD ড্রাইভ স্লট লাগবে যার মধ্যে SSD লাগাতে পারবেন ওই স্লট এর ছবি নিজে দেওয়া হলো।

এছাড়া HDD থেকে অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে, সমস্ত ফাইল কে SSD তে ট্রান্সফার করার জন্য কেবল পাওয়া যায় যার ছবি নিচে দেয়াও হলো। cable টি ব্যবহার করলে সমস্থ হার্ড ড্রাইভের ডাটা সহজেই SSD তে ট্রান্সফার করতে পারবেন এবং তারপর সব লাগিয়ে দিলেই কম্পিউটার চলতে শুরু করবে। সেইসঙ্গে আপনার আগের পুরোনো ফাইল সবই দেখতে পাবেন। অপারেটিং সিস্টেম ও নতুন করে ইনস্টল করতে হবেনা। দেখে নিন cable টি নিচে

এছাড়াও কিছু SSD এর ছবি দিলাম নিচে।দেখে নিন

হার্ডডিস্ক কি? ব্যবহার, সুবিধা অসুবিধা
শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *