ইন্টারনেট কি? কিভাবে কাজ করে? স্লো কেন হয়? স্যাটেলাইট ইন্টারনেট

ইন্টারনেট কি ?

ইন্টারনেট কি ( What is the internet?)

ইন্টারনেট হলো একটি পৃথিবীব্যাপী কম্পিউটারের পরস্পর যুক্ত করা পথের সমন্বয়, ওই পথের মাধ্যমে সহজেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকা সম্ভব এবং তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব।

ইন্টারনেটকে কিছুটা পোস্ট অফিস এর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে এমন একটি পোষ্টের মাধ্যমে কোন জিনিসপত্র এখান থেকে ওখানে পাঠাতে পারবেন এবং সংগ্রহ করতে পারবেন ঠিক সেরকমই কিছুটা।

তবে ইন্টারনেট মাধ্যমে কোনো ডিজিট্যাল ফাইল কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে পাঠানো সম্ভব।

ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এবং কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইস এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার একটি নিয়ম আছে যা (TCP/IP) নামে পরিচিত। অর্থাৎ প্রতিটি নেটওয়ার্ক এর একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা আছে। এবং ওই ঠিকানা তে গিয়ে ডাটা ট্রান্সফার করা হয়।

ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে

ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ডিভাইস এর নির্দিষ্ট একটি ঠিকানা থাকে যা আইপি অ্যাড্রেস নামে পরিচিত।

যখনই কোন কম্পিউটার কোন নির্দিষ্ট কম্পিউটারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই তখন ঐ নির্দিষ্ট ঠিকানা তে গিয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব।

মূলত আমরা যা কিছু করি দৈনন্দিন জীবনে সবকিছুই ইন্টারনেটে এর মাধ্যমে হয়। যেমন , ইউটিউবে ভিডিও দেখা, ফেসবুক করা, অনলাইনে এ টিকিট প্রায় সমস্ত কিছুই ইন্টারনেট এর মাধ্যমে করে থাকি।

অতীতে টিকিট কাটার জন্য লাইন দিয়ে রেলের ব্যাক্তি কে টাকা দিলে উনি টিকিট দিতেন। কিন্তুু এখন ইন্টারনেট এর দ্বারা সরাসরি রেলের কম্পিউটার এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাড়িতে বসেই টিকিট কাটা সম্ভব।

একটি ডিভাইস কে অন্য ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ব্যাবহার করা হয় কেবল। যা অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নামে পরিচিত।

যেকোনো দেশের কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইস যেমন মোবাইল ফোন আসে পাশের কেবিল অপেরটর অথবা কোনো নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে যুক্ত থাকে।

এভাবে কোনো দেশের মধ্যে থাকা ডিভাইস গুলিকে যুক্ত করা হয়।

এরপর ওই দেশের সঙ্গে অন্য দেশ এবং মহাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ব্যাবহার করা হয় অপটিক্যাল ফাইবার কেবিল (optical fiber cable)। ওই গুলি সমুদের তলদেশের মাধ্যমে অন্য দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়।

অপটিক্যাল ফাইবার কেবিলকে সমুদ্রের নিচে বিছানো হয় এবং ক্যাবলের কোনো দেশের একপ্রান্ত থেকে ওপর প্রান্ত পর্যন্ত।

এবং এভাবেই পৃথিবীর মোটামুটি সমগ্র দেশেই ইন্টারনেট পাওয়া যায়।

উদাহরণ হিসাবে যদি আমেরিকা থেকে জাপান এর কোনো কম্পিউটার এর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হয়। তা ঠিক এরকম হবে। প্রথমে আমেরিকা এর স্থানীয় ক্যাবল অথবা wireless নেটওর্য়াক এর মধ্য দিয়ে তারপর প্রশান্ত মহাসাগর এর নিচে থাকা কেবল এর মাধ্যমে জাপান এর স্থানীয় নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে জাপান এ থাকা কম্পিউটার অথবা অন্য কোনো ডিভাইস এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।

আর এভাবেই ইন্টারনেট এর মাধ্যমে একটি দেশের সঙ্গে অন্য দেশ যুক্ত থাকে।

পৃথিবীতে প্রচুর অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে পাতা হয়েছে। আমি সম্পূর্ণ ক্যাবল ওই ম্যাপের ছবি দিলাম দেখে নিন

অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল এর ম্যাপ
Image source: submarinecablemap.com

ইন্টারনেটের দ্বারা আমরা কিভাবে ভিডিও দেখতে পাই? অথবা চ্যাট করতে পারি।

এখানে উদাহরণ হিসেবে ইউটিউবে অথবা ফেসবুক কেই নেওয়া হচ্ছে। যখন আমরা মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে অনলাইন এ ভিডিও দেখি তখন আমাদের কম্পিউটার ইউটিউবের কম্পিউটার এ ( সার্ভার এ) থাকা ভিডিও ফাইল কে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে আমাদের মোবাইল অথবা কম্পিউটারে নিয়ে আসে এবং এই ভিডিও টি আমাদের ডিভাইস এ দেখতে পাই।

একইভাবে যখন ফেসবুক এ কোনো ফটো আপলোড করা হয় ওই ফটো ফেসবুক এর কম্পিউটার ( সার্ভার) এ সঞ্চিত হয়। এবং যখন ওই ফটো আমি অথবা অন্য কেউ দেখে তখন ওই ফটো টি ফেসবুক এর সার্ভার থেকে আমাদের ফোন আসে যা ইন্টারনেট এর মাধ্যমে।

যখন ফেসবুক এ দুজন বাকি চ্যাট করেন তখন ওই চ্যাট এর লেখা গুলো ফেসবুক এর সার্ভার ( কম্পিউটার) এ জমা হয়। এবং অন্য ব্যাক্তি ওই লেখা টি ফেসবুক এর সার্ভার( কম্পিউটার) থেকে দেখতে পায় ইন্টারনেট এর মাধ্যমে।

KB , MB , GB কি , কেনো সিম কোম্পানি টাকা নেন নির্দিষ্ট GB কিংবা MB ডাটা এর জন্য?

ইন্টারনেট এ যখন আমরা কোনো ভিডিও দেখি তখন ওই ভিডিও ফাইল টি আমাদের মোবাইল এর একপ্রকার ডাউনলোড হয়। যা ক্ষণস্থায়ী ভাবে ram ( random access memory) তে সঞ্চিত থাকে।

তাই ভিডিও ফাইল যদি ১ MB হয় তাহলে ওই ১MB ভিডিও ফাইল মোবাইল এ ক্ষণস্থায়ী ডাউনলোড হবে। এবং এই ডাউনলোড এর পরিমাণ সিম কার্ড কোম্পানি নজর রাখে।

যদি আপনি ১ MB এর ডাউনলোড করার জন্য রিচার্জ করে থাকেন তাহলে ১MB ডাউনলোড অথবা ভিডিও দেখার মাধ্যমে ১ MB ডাটা ট্রান্সফার হলেই সিম কোম্পানি আপনার ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করে দেবে। এবং আপনি ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে পারবেন না, যতক্ষণ না রিচার্জ করছেন।

যখন ফেসবুক এ চ্যাট করা হয় অথবা ছবি আপলোড করা হয় তখনও ওই ছবি এর সাইজ অনুযায়ী ডাটা ট্রান্সফার হয়। এবং আপনার রিচার্জ করা ডাটার পরিমাণ কমতে থাকবে।

এখানে KB ,MB, GB হলো ডাটা এর পরিমাণ এর একক।

যেখানে ১ GB মানে ১০২৪ MB এবং ১MB ১০২৪, KB এর সমান।

নেটওয়ার্ক কোম্পানি কিংবা কেবল কোম্পানি ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য কেন টাকা নেয়?

ইন্টারনেট হলো পৃথিবীর এক প্রান্তে ডিভাইস সেই সঙ্গে অন্য প্রান্তে অথবা পৃথিবীর সমস্ত ডিভাইসের সঙ্গে সমস্ত ডিভাইস কে যুক্ত করা যার মাধ্যমে আমরা সহজেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি।

কিন্তু ইন্টারনেট কোম্পানি কেন টাকা নেই এজন্য?

এর কারণ হলো ইন্টার্নেট কম্পানি গুলি অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সমুদ্রের তলা দিয়ে পাতার জন্য এবং অন্য দেশের সঙ্গে কানেক্ট করার জন্য অনেক টাকা খরচ করে শুধু তাই নয় ওই কেবিল এর মধ্যে কোনো রকম কোনো সমস্যা দেখা গেলে তা ঠিক করার জন্য সব সময় কর্মী এর দরকার হয়।

এছাড়াও আপনার মোবাইল কিংবা কম্পিউটার পর্যন্ত ইন্টারনেটকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক খরচ হয়। শুধু তাই নয় এগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য ও অনেক টাকা খরচ হয় সেই জন্যই আপনার মোবাইলকে কিংবা ল্যাপটপ কম্পিউটার কে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমান চার্জ করা হয়।

যদিও কম্পানি গুলি আপনাকে চার্জ করে যখন আপনি ডাটা ট্রানস্ফার করেন।

ইন্টারনেটের মালিক কে

ইন্টারনেটের মালিক কোনো একজন ব্যাক্তি নয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন কোম্পানির দ্বারা ইন্টারনেটের কেবিল বিছানো হয়েছে। তাই কেউই সমস্ত অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল এর মালিক নন। তাই কোন একজন ব্যক্তি ইন্টারনেটের মালিক নন।

যেমন গুগোল কম্পানি কিছু অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল বিছিয়েছে। জাপানের কিছু কোম্পানি জাপান সংলগ্ন জায়গাতে ইন্টারনেটের বিছিয়েছে।

ইন্টারনেট স্লো কেন হয়

ইন্টারনেট স্লো হওয়ার পেছনে একটি কারণ হলো যখন অধিক মাত্রায় ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এবং একই কেবিল এর মধ্য দিয়ে সমস্ত ব্যবহারকারী এটা ট্রান্সফার করেন তখন ইন্টারনেট স্লো হয়।

অথবা যখন সমুদ্রের সাবমেরিন এর মধ্যে কোন সমস্যা দেখা যায় তখন আমাদের যেটা অন্য সাবমেরিন ক্যাবল এর মধ্য দিয়ে যায় যার জন্য অন্য সাবমেরিন কেবিল যদি অনেক ঘুরে ফিরে আপনি যে খানের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে না ওখানে পৌঁছাই তখন কিছুটা বেশি টাইম লেগে যায় যার জন্য slow হতে পারে।

অথবা যদি আপনি কোন দূরের সার্ভারের সঙ্গে ডাটা ট্রান্সফার করেন তখন বিশ্বের দূরত্বের জন্য ইন্টারনেট ধীরে চলতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে যদি আপনি জাপানের সার্ভারের কোন ডেটা নিজের ফোনে দেখতে চান তাহলে যত্রা সময় লাগবে এর তুলনায় যদি আপনি আমেরিকা সার্ভার access করতে চান তাহলে বেশি দূরত্বের জন্য একটু বেশি সময় লাগবে।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট

বর্তমানে ধীরে ধীরে টেকনোলজী উন্নত হচ্ছে এবং ইন্টারনেট পরিষেবা উন্নত হচ্ছে।

এখনও পর্যন্ত সমস্ত বিশ্বের কোণে কোণে ইন্টারনেট পৌঁছোইনি। কিছু দুর্গম এলাকা তে এখানে নেটওর্য়াক এখনও পৌঁছায়নি। শুধু তাই নয় সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ইন্টারনেট পৌঁছনোর খরচ অনেক বেশি।

তাই বর্তমানে স্যাটেলাইট অর্থাৎ কৃত্রিম উপগ্রহের দ্বারা ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করার কাজ চলছে। যদিও স্যাটেলাইট দ্বারা ইন্টারনেট পরিষেবা এখন ব্যাবহার কত হচ্ছে কিন্তুু কোন কোন জায়গাতে কিন্তু স্যাটেলাইট এর দ্বারা ইন্টারনেটের স্পিড খুবই কম হয়।

স্পিড কম হওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত এবং কোন ডেটা স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীতে পৌঁছাতে অনেকটা বেশি সময় লেগে যায় তাই স্যাটেলাইট এর দ্বারা ইন্টারনেট কিছুটা ধীরে চলে।

যদিও আমরা বেশিরভাগ মানুষ এই স্যাটেলাইট এর ধারা ইন্টারনেট ব্যবহার করিনা। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য স্যাটেলাইট এর দ্বারা ইন্টারনেট পরিষেবা উন্নত করা হচ্ছে।

মূলত দুটি কম্পানি একটি হলো স্টারলিনক (starlink) যার প্রতিষ্ঠাতা হলেন এলন মাস্ক (Elon Musk) এবং ওয়ান ওয়েব (OneWeb) কম্পানি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দ্রুত ইন্টারনেট পৃথিবীর কোণে কোণে পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করছে।

starlink হলো একটি আমেরিকান কম্পানি এবং OneWeb হল একটি ইংল্যান্ডের কোম্পানি।

এছাড়াও অনেক কোম্পানি আছে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট প্রদান করার জন্য কাজ করছে।

এইসব কোম্পানি গুলির মূল উদ্দেশ্য হলো দ্রুত ইন্টারনেট সমস্ত জায়গাতেই পৌঁছে দেওয়া যেখানে কেবিল কিংবা অন্য কোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছাতে পারেনি এছাড়াও শহরাঞ্চলে যেখানে ইন্টারনেটের স্পিড স্লো।

দ্রুত ইন্টারনেট প্রদানের জন্য কম্পানি অনেক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাবে এবং স্যাটেলাইট গুলি যথাসম্ভব পৃথিবীর কাছাকাছি থাকবে সেই কারণে ইন্টারনেটের স্পিড বৃদ্ধি পাবে।

যদি কোনরকম কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন। আপনি শীঘ্রই উত্তর পাবেন। ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *