ভাইরাস (VIRUS) এর অর্থ হল ভাইটাল ইনফরমেশন রিসোর্সেস্ আন্ডার সিজ (Vital Information Resources Under Seize) অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলির বাজেয়াপ্তকরণ।
কম্পিউটার ভাইরাস হল এমন একটি প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারের অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিশেষত এক্সিকিউটেবল (executable) অংশে সংক্রমণ ঘটিয়ে কম্পিউটার মেমরির ক্ষতিসাধন করে, যা কম্পিউটার মেমরির ধ্বংসসাধনও নিশ্চিত করে তোলে।
কম্পিউটার ভাইরাসা বলতে এই ধরনের কোনো ক্ষুদ্র জীবকে বোঝান হয় না। তবে উভয় ভাইরাসই প্রচুর ক্ষতিসাধন করে—এমনকি ধ্বংস করতে পারে। এইদিক থেকে উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে।
ভাইরাস সাধারণত ক্ষতি করে সফ্টওয়্যারের। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার বা কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতিকে সাধারণত ভাইরাস এখনও পর্যন্ত ক্ষতিসাধন করতে পারে না।
প্রখ্যাত গবেষক ‘ফ্রেড কোহেন’ (Fred Cohen) ভাইরাসের নামকরণ করেন।
কম্পিউটার ভাইরাসের শ্রেণীবিভাগ:
কম্পিউটার ভাইরাস গুলির আক্রমণ করার বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার ভাইরাস কে ৩ টি শ্রেণীতে শ্রেণীভাগ করা হয় থাকে সাধারণত , যা হলো :
- বুট ভাইরাস (Boot Virus) : এই কম্পিউটার ভাইরাস গুলি কম্পিউটারের বুটিং সিস্টেম কে আক্রমণ করে থাকে।
- প্রোগ্রাম ভাইরাস (Program Virus) : এগুলি সাধারণত প্রোগ্রাম ফাইল কে আক্রমণ করে থাকে। যেমন যেসব ফাইল এর এক্সটেনশন .exe, .dil, .sys।
- ম্যাক্রো ভাইরাস (Macro Virus) : এই ভাইরাস গুলি সাধারণত কম্পিউটারে রাখা ফাইল, ডেটা কে আক্রমণ করে।
ভাইরাস কম্পিউটারের কীভাবে ক্ষতি করে?
বর্তমান দিনে কম্পিউটার ছাড়া দুনিয়া অচল। কম্পিউটার ব্যবহার করেই মানব সভ্যতা উন্নতির শিখরে উঠেছে। এবং ওই অবস্থায় কিছু মানুষ এই কম্পিউটারকে আক্রান্ত করে নিজেদের ইনকাম করার লক্ষ্য নিয়ে এরকম কম্পিউটার ভাইরাস বানিয়ে কম্পিউটারের ডেটা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
কম্পিউটার ভাইরাস যেভাবে কম্পিউটারে ক্ষতি করে তা হলো :
- কোনো কোনো ভাইরাস চালু কম্পিউটারকে চলতে চলতে স্থির করে দেয়, যখন ওই অসহায় কম্পিউটারকে বন্ধ (shut down) করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। ফলে অনেক মূল্যবান, সেভ না-করা ডাটা নষ্ট হয়ে যায়।
- কোনো কোনো ভাইরাস হার্ড ডিস্কের বুট সেক্টরকে (Boot Sector) আক্রান্ত করে তাকে অকেজো করে ফেলে। তখন হার্ড ডিস্ক ফরম্যাট করা ছাড়া উপায়ান্তর থাকে না। ফলে অনেক প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান ফাইল বা ডাটাকে হারাতে হয়।
- বায়োসের (BIOS) সব প্রোগ্রাম মুছে দিয়ে কম্পিউটারকে অচল করে দিতে পারে, যা তখন একটি কালো বাক্সে পরিণত হয়।
- অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত কোনো প্রোগ্রামের এক্সিকিউটেবল ফাইলকে আক্রমণ করে তাকে অচল (corrupt) করে ফেলে, ফলে প্রোগ্রামটি তার কার্য করার ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে।
- কোনো কোম্পানির ওয়েব পেজের তথ্যগুলিকে বিকৃত করে তার ব্যাবসায়িক ক্ষতি করে। ফলে তার বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ও ব্যবসায়িক ভাবমূর্তি উভয়ই নষ্ট হয়।
- আবার, প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো কোম্পানির কম্পিউটারাইজ কর্পোরেট সিস্টেমে ভাইরাস অনুপ্রবেশ করে। অনেক গোপন তথ্য অপরকে পাচার করে ওই কোম্পানির প্রভূত ক্ষতি করতে পারে।
- কিছু ভাইরাস সামান্য কিছু বিট ডাটা পরিবর্তন করে হিসাব-নিকাশের বিরাট তারতম্য ঘটায়, যা অর্থনৈতিক ক্ষতিকে অবর্ণনীয় করে তোলে।
- আবার, দরকারি কোনো কোনো প্রোগ্রামের সামান্য কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে তার স্বাভাবিক কাজকর্মকে অস্বাভাবিক করে তোলে এবং ক্ষতির পরিমাণকে অকল্পনীয় করে তোলে। যেমন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা নিরাপত্তা কার্যক্রমের সামান্য হেরফের ঘটিয়ে মানুষ মৃত্যুর কারণ সৃষ্টি করে।
- কোনো কোনো ভাইরাস হার্ড ডিস্ক সম্পূর্ণ ফরম্যাট (Format) করে সব গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম ও তথ্য মুছে দিতে পারে।
এককথায় ভাইরাসের ক্ষতি করার পরিমাণ অসীম।
কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হলে বুঝবেন কিভাবে?
বর্তমান দিনে কিছু কিছু ভাইরাস আছে যা আপনার কম্পিউটারের ডিসপ্লে সম্পূর্ণরূপে দেখতে পাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এছাড়াও কিছু ভাইরাস আছে, যা আপনার কম্পিউটাররের ফাইলকে লক (lock) করে দিতে পারে।
তাই বর্তমানে কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হলে সহজে বোঝা সম্ভব হয়না। যদিও কিছু বিষয়গুলি লক্ষ্য করতে পারেন :
- কম্পিউটার যদি খুব স্লো হয়ে যায়।
- স্টোরেজ এর জায়গা যদি কমে আসে।
- কম্পিউটারের স্ক্রিনে যদি অদ্ভুত অদ্ভুত ম্যাসেজ আসে।
- কম্পিউটার যদি বিনা কারণে হটাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়।
এরকম বিষয়গুলি লক্ষ করতে পারেন।
কম্পিউটারকে ভাইরাস মুক্ত করতে কি করা উচিত?
কম্পিউটারকে ভাইরাস মুক্ত করতে হলে এন্টিভাইরাস ইনস্টল করুন।
আরো জানুন: এন্টিভাইরাস কি?
এছাড়াও বর্তমানে আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থাকেন তাহলে নিয়মিত উইন্ডোজ থেকে সিক্যুরিটি আপডেট পাওয়া যায়। তাই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম কে up to date করে রাখতে হবে।
আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন তাহলে আলাদা করে কম্পিউটারকে এন্টিভাইরাস এর প্রয়োজন নেই। শুধু উইন্ডোজ এর থেকে যেসব আপডেট পাওয়া যায় ওই আপডেট করে রাখলেই কম্পিউটার ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকবে।