শেয়ার কি?
শেয়ার হল একটি কর্পোরেশনে ইক্যুইটি মালিকানার একক । কোনো কর্পোরেশনের মধ্যে অনেক অংশীদার থাকতে পারে এবং ওই সমস্ত অংশীদারির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে শেয়ার বলা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন: ইক্যুইটি কি?
যেমন: আপনি দুজন বন্ধু A B মিলে একটি কোম্পানি বানানো , ৫০ ৫০ শতাংশ শেয়ার দুজনের থাকলো। এবার ১০০ শতাংশ অংশীদারিকে ১০ টি অথবা ১০০ টি অথবা ১০০০ টি ভাবে বিভক্ত করলো।
ধরুন, ১০ টি টুকরো করলো। যার মধ্যে ৫ টি টুকরো A নিলো এবং ৫ টি টুকরো B নিলো। এবার A অথবা B চাইলে ওই ৫ টি টুকরোর ১ টিকে বিক্রি করতে পারে। এই এক একটি টুকরো কেই শেয়ার বলা হয়ে থাকে।
যখন কোম্পানির লাভ হবে , তখন একইভাবে ভাগ হয়ে যাবে লভ্যাংশ সবার মধ্যে। ধরুন লভ্যাংশ হিসেবের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো প্রতি শেয়ার পিছু ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। তাহলে যার কাছে ৫ টি টুকরো (শেয়ার) থাকবে তাকে ৫ লক্ষ দেওয়া হবে এবং যার কাছে ৪ টি থাকবে তাকে ৪ লক্ষ এবং ১ টি শেয়ার এর জন্য ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।
শেয়ার সমন্ধে অধিক ব্যাখ্যা
একটি কোম্পানি তৈরী করার সময় অথবা কোম্পানির বিস্তার করার জন্য অনেক টাকার দরকার পড়ে , এই টাকা ব্যাঙ্ক থেকে অথবা বন্ড হিসেবে নিলে সুদ সমেত ফেতর দিতে হবে। এতে অনেক রিস্ক থাকে।
তাই ওই কোম্পানির শেয়ারকে কিছু বিনিয়োগকারীকে বিক্রি করে টাকা জোগাড় করা হয় কোম্পানির বিস্তারের জন্য। বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে টাকার পরিবর্তে শেয়ার অর্থাৎ কোম্পানির অংশীদারি দেওয়া হয় যার ফলে কোনো সুদ অথবা ওই টাকা ফেরৎ দিতে হয়না। এই কারণেই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করা হয়।
শেয়ার বাজার কি?
শেয়ার বাজার হল সেই জায়গা যেখানে বিনিয়োগকারী বা ব্যবসায়ীরা স্টক এক্সচেঞ্জে সমস্ত আর্থিক সিকিউরিটি ক্রয় বা বিক্রি করে ।শেয়ার কেনার মাধ্যমে, আপনি কোম্পানির মধ্যে একটি বিনিয়োগ করছেন৷ কারণ কোম্পানি বৃদ্ধি পায়, আপনার শেয়ারের মূল্যও বাড়তে পারে।
অর্থাৎ, যেখানে শেয়ারের এবং আর্থিক সিকিউরিটির কেনা বেচা হয় , ওই মার্কেটকে শেয়ার বাজার অথবা Stock Market বলা হয়।
শেয়ার মার্কেটের প্রকারভেদ
এখন যেহেতু আমরা স্টক মার্কেটের অর্থ বুঝতে পেরেছি, স্টক মার্কেটের মূল বিষয়গুলির একটি মূল দিক হল যে কেউ দুটি বাজার বিভাগের একটিতে ট্রেড করতে পারে। অন্য কথায়, ভারতে দুই ধরনের শেয়ার বাজার রয়েছে। এগুলি হল প্রাথমিক বাজার (Primary Market) এবং দ্বিতীয় বাজার (Secondary Market)।
কোনো কোম্পানি যখন প্রথমবার কোম্পানির শেয়ার public কে বিক্রি করতে চায়, তখন ওই প্রাইমারি মার্কেটে বিক্রি হয়।
অর্থাৎ, কোম্পানির শেয়ার Public কে বিক্রি করে কোম্পানি সরাসরি ওই শেয়ার বিক্রি করার মাধ্যমে টাকা পায়।
ওই টাকা কোম্পানির বিস্তার, লোন পরিশোধ অথবা অন্য কোনো কাজের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
কোম্পানি যখন প্রথমবার public কে শেয়ার বিক্রি করে এবং টাকা তোলে। এই প্রসেস কে আইপিও বলা হয়ে থাকে।
আইপিও এর মাধ্যমেই কোম্পানির শেয়ার public প্রথমবার কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারে।
আরো জানুন : IPO কি?
প্রাইমারি মার্কেট অর্থাৎ আইপিও এর মাধ্যমে শেয়ার কেনার পরে। ওই শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে কেনা বেচা হতে থাকে।
অর্থাৎ যারা প্রাইমারি মার্কেটে শেয়ার কিনেছিল কোম্পানির কাজ থেকে তারা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি করতে পারবে।
এরপর, সেকেন্ডারি মার্কেটে যে কেউ শেয়ার কিনে আবার বিক্রি করতে পারবে।
সেকেন্ডারি মার্কেটে কোম্পানি কোনো শেয়ার বিক্রি করে না।
আমরা শেয়ার মার্কেটের প্রতিদিন শেয়ার কেনা বেচা করি । ওটা সেকেন্ডারি মার্কেটেই করা হয়ে থাকে।
সেকেন্ডারি মার্কেটে একজন আর একজনকে শেয়ার বিক্রি করছে। এভাবেই ওই কোম্পানির কিছু পরিমাণ অংশীদারি একজনের থেকে অন্যজনের কাছে যেতে থাকে।
ধরুন, কোনো শেয়ার কেনার জন্য বেশি পরিমাণ মানুষ চেষ্টা করবে তখন ওই শেয়ারের দাম বেড়ে যাবে এবং ওই শেয়ার কিনতে না চাইলে এবং খুবই কম মানুষ কেনার জন্য কম দাম দিচ্ছে তখন ওই শেয়ারের ডিমান্ড কমে যাবে অর্থাৎ দামও কমে যাবে ওই কোম্পানির শেয়ারের মূল্য এর।
শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে?
শেয়ার বাজার নিম্নলিখিত ক্রমে কাজ করে:
- একটি কোম্পানি একটি আইপিওর মাধ্যমে প্রাথমিক বাজারে তালিকাভুক্ত হয়।
- শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে বিতরণ করা হয়
- জারি করা স্টক সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগকারীরা ট্রেড করতে পারে।
- স্টক ব্রোকার এবং ব্রোকারেজ ফার্ম হল স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে নিবন্ধিত সত্তা যা আপনাকে উক্ত মূল্যে নির্দিষ্ট শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেয়
- আপনার ব্রোকার আপনার ক্রয়ের অর্ডার এক্সচেঞ্জে পাঠায়, যেটি একই শেয়ারের জন্য একটি বিক্রয় আদেশ অনুসন্ধান করে।
- প্রক্রিয়াটি T+2 দিন সময় নেয় অর্থাৎ আপনি দুই কার্যদিবসের মধ্যে আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে আপনার শেয়ার জমা পাবেন।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগের অন্যতম বড় উপায়। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকে প্রায়ই জুয়া বলা হয়। আপনি যদি শেয়ার বাজারের মূল বিষয়গুলি বুঝতে পারেন তবে এটি একটি জুয়া হওয়া বন্ধ হবে।
কিন্তু শুরু করার আগে, আপনি বাজার-সম্পর্কিত কয়েকটি ধারণার সাথে পরিচিত হতে চাইতে পারেন।
শেয়ার বাজারে অর্থ বিনিয়োগ করবেন কীভাবে?
শেয়ার মার্কেটে ট্রেডিং অথবা ইনভেস্ট করার জন্য ট্রেডিং এবং ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট এর প্রয়োজন হবে। ট্রেডিং এবং ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্যাঙ্ক অথবা স্টক ব্রোকার এর কাছে যেতে হবে। বর্তমানে প্রায় সমস্তকিছুই অনলাইন হয়ে গেছে।
আরো জানুন: ট্রেডিং এবং ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট কি?
স্টক ব্রোকার আপনার একাউন্ট খুলে দেবে এবং আপনি সহজেই ওই অ্যাকাউন্টর মাধ্যমে ট্রেডিং এবং ইনভেস্টিং করতে পারবেন।
কেন শেয়ার বাজার গুরুত্বপূর্ণ
কোম্পানির টাকার দরকার হলে ব্যাঙ্ক অথবা বন্ড এর মাধমে টাকা নিতে গেলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। এছাড়াও ব্যাংক এবং বন্ড এর মাধ্যমে কোম্পানি টাকা ধার হিসেবে নিলে ওই টাকা ফেরাতে দেওয়ার সময় সুদ সমেত ফেরত দিতে হবে।
কিন্তু, কোম্পানি যদি ওই কোম্পানির অংশীদারি কিছুটা বিক্রি করে দে বিনিয়োগকারীকে তাহলে কোম্পানিকে কোনো প্রকারের সুদ অথবা আসল টাকা ফেরত দিতে হবে না। ওই টাকা কোম্পানির বিস্তারের কাজে লাগাতে পারবে।
এছাড়াও বিনিয়োগদেরও অনেক সুবিধা আছে, যেমন :
- বিনিয়োগকারী সহজেই কোম্পানির অংশীদার হতে পারে।
- কোম্পানির বিস্তার হওয়ার পরে কোম্পানি যত বেশি লভ্যাংশ আয় করবে তত বেশি লভ্যাংশ বিনিয়োগকারী পেতে পারে।
- অথবা কোম্পানির লাভ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানির শেয়ার এর মূল্য বাড়তে থাকে। যার ফলে সস্তায় শেয়ার কিনে বেশি দামে বিক্রি করে বেশি মুনাফা হওয়া সম্ভব।
- এছাড়াও কোম্পানি যদি পরবর্তীকালে কোম্পানির শেয়ার পূর্ণরায় কিনে নিতে চায়, তখন ওই শেয়ার বেশি দাম দিয়ে বিক্রি করে লাভ করতে পারেন।
শেয়ার মার্কেটের ফলে দেশের আর্থিক উন্নয়ন সম্ভব হয়। কারণ কোম্পানি শেয়ার মার্কেট থেকে টাকা পাওয়ার পরে আরো বিস্তার করতে পারে যার ফলে ওই কোম্পানি আরো অনেক বেশি পরিমান কর্মসংস্থান তৈরী করতে সক্ষম। এভাবেই শেয়ার মার্কেট দেশের অর্থনীতিকে যোগদান করে।
শেয়ার বাজার ডাউন হয় কেন?
যখন শেয়ার মার্কেটে সবাই শেয়ার কিনতে চায় তখন শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে , কারণ ডিমান্ড বাড়লে দাম বাড়বে।
আবার যখন শেয়ার বাজারে সবাই শেয়ার বিক্রি করতে চায় তখন শেয়ারের দাম কমে যায়।
শেয়ার বিক্রি করতে চাওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন :
- সরকারের পলিসি যা কোম্পানির মুনাফা কমিয়ে দিতে পারে।
- কোম্পানি লাভ কমে যাচ্ছে। অথবা কোম্পানির গ্রোথ নেই।
- এছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়ে মানুষের টাকার দরকার পড়লে শেয়ার বাজারের শেয়ার বিক্রি করে দেয়। যার ফলে শেয়ারের দাম কমে যায়।
- এছাড়াও অর্থনৈতিক মন্দ, কোনো ক্ষতি , দুর্যোগ বা এমনকিছু যা কোম্পানির লাভ্যাংশওকে কম করতে পারে এইসব কারণে শেয়ার বাজার ডাউন হয়ে থাকে।